পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/২১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ অনেকেরই। হঠাৎ দেখা যায় তাহার আচরণে ধৈর্যের অভাব বহুস্থলেই যেন চাপ পড়িতে চাহে না, মনে হয় আলাপ-আলোচনা অকারণে রূঢ়তার ধার বেসিয়া আসে, মন্তব্য-প্রকাশের অহেতুক তীক্ষত চাকর-বাকরণের কানে অস্থত গুনা-কিন্তু কেন যে এমন ঘটিতেছে তাহাও ভাবিয়া পাওয়া দুষ্কর। রোগের বাড়াবাড়ির মধ্যেও এ বিকৃতি র্তাহাতে অবিশ্বাস্ত মনে হইত, তখন ত তিনি সারিয়া আসিতেছেন। কিন্তু হেতু যাই হোক, একটু লক্ষ্য করিলেই বুঝা যায় তাহার নিভৃত চিত্ত-তলে যেন একটা দাহ চলিতেছে ; তাহারই অগ্নিস্ফুলিঙ্গ মাঝে মাঝে বাহিরে ফাটিয়া পড়ে। প্রকাশ করিয়া আজও বলেন নাই বটে, কিন্তু আভাস পাওয়া যায় যে, আগ্রাবাসের দিন তাহার ফুরাইয়া আসিল । হয়ত আর একটুখানি সুস্থ হওয়ার বিলম্ব। তার পরে হঠাৎ যেমন একদিন আসিয়া উপস্থিত হইয়াছিলেন, তেমনি হঠাৎ আর একদিন নিঃশব্দে অন্তৰ্হিত হইয়া যাইবেন । বিকেলবেলাটায় আজকাল পদস্থ বাঙালীদের অনেকেই দেখা করিয়া খোজ লইতে আসেন। সপত্নীক ম্যাজিষ্ট্রেটসাহেব, রায়বাহাদুর, সদরআল, কলেজের অধ্যাপকমণ্ডলী—নানা কারণে স্থানত্যাগের সুযোগ যাহারা পান নাই তাহারা— হরেক্স, অজিত এবং বাঙালী-পাড়ার র্যাহারা আনন্দের দিনে—বহু পোলাও-মাংস উদরন্থ করিয়া গেছেন তাহাদের কেহ কেহ। আসে না শুধু অক্ষয়, এখানে সে নাই বলিয়া ; মহামারীর স্বচনাতেই সস্ত্রীক বাড়ি গিয়াছে, বোধ হয় দেশ ঠাণ্ডা হওয়ার সংবাদ পৌছিবার প্রতীক্ষণ করিতেছে। আর আসে না কমল । সেই যে আসিয়াছিল, আর তাহার দেখা নাই । * আপ্তবাবু মজলিশি লোক, তথাপি তেমন করিয়া মজলিশে আর যোগ দিতে পারেন না, উপস্থিত থাকিলেও প্রায় নীরবে থাকেন—ৰ্তাহার স্বাস্থ্যহীনতা স্মরণ করিয়া লোকে সানন্দে ক্ষমা করে। একদিন যে-সকল কর্তব্য মনোরমা করিত, আত্মীয় বলিয়া এখন বেলাকে তাহা করিতে হয় । আতিথেয়তার কোথাও ক্রটি ঘটে না, বাহিরের লোকে বাহির হইতে আসিয়া ইহার রসটুকুই উপভোগ করে, হয়ত বা, সভাশেৰে পরিতৃপ্তচিত্তে এই নিরভিমান গৃহস্বামীকে মনে মনে ধন্যবাদ জানাইয়া সবিস্ময়ে ভাবে, অভ্যর্থনায় এমন নিখুত ব্যবস্থা এই পীড়িত মানুষটিকে দিয়া নিতাই কি করিয়া, সম্ভবপর হয় । s. সম্ভব কি করিয়া যে হয়—এই ইতিহাসটুকুই গোপনে থাকে। নীলিমা সকলের সন্মুখে বাহির হইত না, অভ্যাসও ছিল না, ভালও বাসিত না। কিন্তু অন্তরাল হইতে তাহার জাগ্রত দৃষ্টি সৰ্ব্বক্ষণ এই গৃহের সর্বত্রই পরিব্যাপ্ত থাকে। তাছা যেমন নিগুঢ়, २९ ७