পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/২৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ উগ্র হয়ে উঠে, মনে হয় যেন এখনো ঢের বাকি—এও ঠিক তেমনি। শম্যতি নেই বলে এ-ক্ষেত্রেও তারা আক্ষেপ করে যাননি। তাদের বিবেচনা ছিল । হরেন্দ্র, অজিত, বেলা ও নীলিমা চারিজনেই হাসিয়া উঠিল। ஜ আণ্ডবাবু বলিলেন, হাসির কথা নয়। মেয়েটার উপহাস ও বিক্রপে যেন হতবাক হয়ে গেলাম, নিজেকে সামলে নিয়ে বললুম, এ তাদের অভিপ্রায় নয়, ভোগের মধ্যে তৃপ্তি নেই, কামনার নিবৃত্তি হতে পারে না, এই ইঙ্গিতই তার করে গেছেন। কমল একটুখানি থেমে বললে, কি জানি, এমন বাহুল্য ইঙ্গিত তারা কেন করে গেলেন। এ কি হাটের মাঝখানে বসে যাত্রা শোনা, না প্রতিবেশীর গৃহের গ্রামোফোনের বাজনা যে, মাঝখানেই মনে হবে, থাক, যথেষ্ট তৃপ্তিলাভ করা গেছে—আর না। এর আসল সত্তা তো বাইরের ভোগের মধ্যে নেই—উৎস ওর জীবনের মূল্য, ঐখান থেকে ও নিত্যকাল জীবনের আশা, আনন্দ ও রসের যোগান দেয়। শাস্ত্রের ধিক্কার ব্যর্থ হয়ে দরজায় পড়ে থাকে, তাকে স্পর্শ করতেও পারে না। বললুম, তা হতে পারে, কিন্তু যে রিপু, ওকে তো মানুষের জয় করা চাই ? কমল বললে, কিন্তু রিপু বলে গাল দিলেই তো সে ছোট হয়ে যাবে না। প্রকৃতির পাকা দলিলে সে দখলদার—তাদের কোন সত্তাটা কে কবে শুধু বিদ্রোহ করেই সংসারে ওড়াতে পেরেচে ? দুঃখের জালায় আত্মহত্য করাই তো দুঃখকে জয় করা নয় ? অথচ ঐ-ধরণের যুক্তির জোরেই মানুষ অকল্যাণের সিংহদ্বারে শক্তির পথ হাতত্ত্বে বেড়ায় । শান্তিও মেলে না, স্বস্তিও ঘোচে । Eă গুনে মনে হ’লে ও-বুঝি কেবল আমাকেই খোচা দিলে। এই বলিয়া ক্ষণকাল মৌন থাকিয়া কহিলেন, কি যে হ’লে মুখ দিয়ে হঠাৎ বেরিয়ে গেল, কমল, তোমার নিজের জীবনটা একবার তেবে দেখ দিকি । কথাটা বলে ফেলে কিন্তু নিজের কানেই বিধলে, কারণ কটাক্ষ করার মত কিছুই তো তার নেই—কমল নিজেও বোধ হয় আশ্চৰ্য্য হ’লে, কিন্তু রাগ অভিমান কিছুই করলে না, শান্তমুখে আমার পানে চেয়ে বললে, আমি প্রতিদিনই ভেবে দেখি আপ্তবাবু। দুঃখ যে পাইনি তা বলিনে, কিন্তু তাকেই জীবনের শেষ সত্য বলে মেনেও নিইনি। শিবনাথের দেবার যা ছিল তিনি দিয়েচেন, আমার পাবার যা ছিল তা পেয়েচি—আনন্দের সেই ছোট ক্ষণগুলি মনের মধ্যে আমার মণি-মাণিক্যের মত সঞ্চিত হয়ে আছে। নিফল চিত্তস্বাহে পুড়িয়ে তাদের ছাই করেও ফেলিনি, শুকনো ঝরণার নীচে গিয়ে ভিক্ষে দাও বলে পূণ্ঠ দু'হাত পেতে দাড়িয়েও থাকিনি। তার ভালবাসার আয়ু যখন ফুরালো, তাকে শান্তমনেই বিদায় দিলাম, আক্ষেপ ও অভিযোগের ধোয়ায় আকাশ কালো করে ३३९