পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/২৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S్చ8 দশ-বারোদিন কমল আগ্রা ছাড়িয়া কোথায় চলিয়া গেছে, অথচ আপ্তবাবুর তাহাকে অত্যন্ত প্রয়োজন। কম-বেশি সকলেই চিন্তিত, কিন্তু উদ্বেগের কালে মেঘ সবচেয়ে জমাট বাঁধিল হরেন্দ্রর ব্রহ্মচৰ্য্যাশ্রমের মাথার উপর। ব্ৰহ্মচারী হরেন্দ্র অজিত উৎকণ্ঠার পাল্লা দিয়া এমনি শুকাইয়া উঠিতে লাগিল যে, তাহদের ব্রহ্ম হারাইলেও বোধ করি এতটা হইত না। অবশেষে তাহারাই একদিন খুজিয়া বাহির করিল। অথচ ঘটনাটা অতিশয় সামান্ত । কমলের চা-বাগানের ঘনিষ্ঠ পরিচিত একজন ফিরিঙ্গী সাহেব বাগানের কাজ ছাড়িয়া রেলের চাকুরী লইয়া সম্প্রতি টুন্‌ডলায় আসিয়াছে ; তাহার স্ত্রী নাই, বছর-দুয়েকের একটি ছোট মেয়ে ; অত্যন্ত বিব্রত হইয়া সে কমলকে লইয়া গেছে, তাহারই ঘর-সংসার গুছাইয়া দিতে তাহার এত বিলম্ব । আজ সকালে সে বাসায় ফিরিয়াছে, অপরাহ্লে মোটর পাঠাইয়া দিয়া আগুবাৰু সাগ্রহে প্রতীক্ষা করিয়া আছেন । বেলার ম্যাজিষ্ট্রেটের বাটিতে নিমন্ত্রণ, কাপড় পরিয়া প্রস্তুত হইয়া সে-ও গাড়ীর জন্ত অপেক্ষা করিতেছে । இ. সেলাই করিতে করিতে-নীলিমা হঠাৎ বলিয়া উঠিল, সে লোকটার পরিবার নেই, একটি কচি মেয়ে ছাড়া বাসায় আর কোন স্ত্রীলোক নেই, অথচ তারই ঘরে কমল স্বচ্ছন্দে দশ-বারোদিন কাটিয়ে দিলে। আশুবাবু অনেক কষ্টে ঘাড় ফিরাইয়া তাহার প্রতি চাহিলেন, এ-কথার তাৎপৰ্য্য যে কি ঠাহর করিতে পারিলেন না । নীলিমা যেন আপন-মনেই বলিতে লাগিল, ও যেন ঠিক নদীর মাছ । জলে তেজা, না-ভেজার প্রশ্নই ওঠে না ; খাওয়া-পরার চিন্তা নেই, শাসন করার অভিভাবক নেই, চোখ রাঙাবার সমাজ নেই–একেবারে স্বাধীন। আশুবাবু মাথা নাড়িয়া মৃদুকণ্ঠে কহিলেন, অনেকটা তাই বটে। ওর রূপ-যৌবনের সীমা নেই, বুদ্ধিও যেন তেমনি অফুরন্ত। সেই রাজেন ছেলেটির লঙ্গে ক’দিনের বা জানা-শোনা, কিন্তু উৎপাতের ভয়ে কোথাও যখন তার ঠাই হ’লে না, ও তাকে অসঙ্কোচে ঘরে ডেকে নিলে। কারও মতামতের মুখ চেয়ে তার নিজের কৰ্ত্তব্যে বাধা দিলে না। কেউ যা পারলে না ও তাই অনায়ালে পারলে। ૨૨?