পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/২৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষ প্রশ্ন নীলিমা চঞ্চলপদে উঠিয়া দাড়াইল । কোথাও যাইবার জন্য নহে, এই ধরণের আলোচনায় ব্যক্তিগত ইঙ্গিতে চিরদিনই সে যেন অস্থির হইয়া পড়িত। বহুক্ষেত্রে প্রিয়জনে তাহাকে ভুল বুঝিয়াছে, তথাপি এমনিই ছিল তাহার স্বভাব। কথাটা তাড়াতাড়ি চাপা দিয়া কহিল, কমল, তোমাকে আমাদের দুটো খবর দেবার অাছে। কমল তাহার মনের ভাব বুঝিল, হাসিয়া কহিল, বেশ তো, দেবার থাকে দিন। নীলিমা আগুবাবুকে দেখাইয়া বলিল, উনি লজ্জায় তোমার কাছে মুখ লুকিয়ে আছেন, তাই, আমিই ভার নিয়েচি বলবার। মনোরমার সঙ্গে শিবনাথের বিবাহ স্থির হয়ে গেছে—পিতা ও ভাবী শ্বশুরের অনুজ্ঞা ও আশীৰ্ব্বাদ প্রার্থনা করে দুজনেই পত্র দিয়েচেন। শুনিয়া কমলের মুখ পাংগু হইয়া গেল, কিন্তু তৎক্ষণাৎ আত্মসংবরণ করিয়া কহিল, তাতে ওঁর লজ্জা কিসের ? নীলিমা কহিল, সে ওঁর মেয়ে বলে। এবং চিঠি পাবার পরে এই কটা দিন কেবল একটি কথাই বার বার বলেচেন, আগ্রায় এত লোক মারা গেল, ভগবান তাকে দয়া করলেন না কেন ? জ্ঞানতঃ কোনদিন কোন অন্যায় করেননি, তাই একান্ত বিশ্বাস ছিল ঈশ্বর ওঁর প্রতি সদয় । সেই অভিমানের ব্যথাই যেন ওঁর সকল বেদনার বড় হয়ে উঠেচে । আমি ছাড়া কাউকে কিছু বলতে পারেননি এবং রাত্রিদিন মনে মনে কেবল তোমাকেই ডেকেচেন। বোধ হয় ধারণা এই যে, তুমিই শুধু এর থেকে পরিত্রাণের পথ বলে দিতে পার । কমল উকি দিয়া দেখিল আগুবাবুর মুদ্রিত দুই চক্ষুর কোণ বাহিয়া ফোটা-কয়েক জল গড়াইয়া পড়িয়াছে ; হাত বাড়াইয়া সেই অশ্রু নিঃশব্দে মুছাইয়া দিয়া সে নিজেও প্তব্ধ হইয়া রহিল। বহুক্ষণ পরে জিজ্ঞাসা করিল, একটা খবর তে এই, আর একটা ? নীলিমা রহস্তচ্ছলে কথাটা বলিতে চাহিলেও ঠিক পারিয়া উঠিল না, কহিল, ব্যাপারটা অভাবিত, নইলে গুরুতর কিছু নয়। আমাদের মুখুয্যেমশায়ের স্বাস্থ্যের জন্য সকলেরই দুশ্চিন্তা ছিল, তিনি আরোগ্যলাভ করেচেন এবং পরে দাদা এবং বৌদি র্তার একান্ত অনিচ্ছাসত্বেও জোর-জবরদস্তি একটি বিয়ে দিয়ে দিয়েচেন । লজ্জার সঙ্গে খবরটি তিনি আণ্ডবাবুকে চিঠি লিখে জানিয়েচেন, এইমাত্র। এই বলিয়া এবার সে নিজেই হাসিতে লাগিল। " এ হাসির মধ্যে মুখও নাই, কৌতুকও নাই । কমল তাহার মুখের প্রতি চাহিয়া বলিল, এ দুটোই বিয়ের ব্যাপার। একটা হয়ে গেছে, আর একটা হবার २९*