পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/২৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎসাহিত্য-সংগ্ৰহ আশীৰ্ব্বাদ করুন, ভুল যদি ভাঙে তখন যেন সে তাকে মুক্ত করে নিতে পারে, তখন যেন কোন লোভ, কোন ভয় না তাকে রাহুগ্ৰস্ত করে রাখে। আপ্তবাবু চুপ করিয়া রহিলেন। জবাব দিতে বাধিল, কিন্তু স্বীকার করিতেও ঢের বেশি বাধিল । বহুক্ষণ পরে বলিলেন, পিতার দৃষ্টি দিয়ে আমি মণির ভবিষ্যৎজীবন অন্ধকার দেখতে পাই । তুমি কি তবুও সত্যিই বল যে আমার বাধা দেওয়া উচিত নয়, নীরবে মেনে নেওয়াই কৰ্ত্তব্য ? আমি মা হলে মেনে নিতুম। তার ভবিষ্যতের আশঙ্কায় হয়ত আপনারই মত কষ্ট পেতুম, তবু এই উপায়ে বাধা দেবার আয়োজন করতুম না। মনে মনে বলতুম, এ-জীবনে যে-রহস্তের সামনে এসে আজ সে দাড়িয়েচে, সে আমার সমস্ত দুশ্চিন্তার চেয়েও বৃহৎ । একে স্বীকার করতেই হবে। আগুবাবু কিছুক্ষণ মৌন থাকিয়া কহিলেন, তবু বুঝতে পারলুম না কমল। শিবনাথের চরিত্র, তার সকল দুষ্কৃতির বিবরণ মণি জানে। একদিন এ-বাড়িতে আসতে দিতেও তার আপত্তি ছিল, কিন্তু আজ যে সম্মোহনে তার হিতাহিত-বোধ, তার সমস্ত নৈতিক বুদ্ধি আচ্ছন্ন হয়ে গেছে, সে ত যথার্থ ভালবাসা নয়, সে যাছ, সে মোহ ; এ মিথ্যে যেমন করে হোক নিবারণ করাই পিতার কৰ্ত্তব্য । এইবার কমল একেবারে স্তন্ধ হইয়া গেল এবং এতক্ষণ পরে উভয়ের চিন্তার প্রকৃতিগত প্রভেদ তাহার চোখে পড়িল । ইহাদের জাতিই আলাদা এবং প্রমাণের বস্তু নয় বলিয়াই এতক্ষণের এত আলোচনা একেবারেই সম্পূর্ণ বিফল হইল। যেদিকে র্তাহার দৃষ্টি আবদ্ধ সেদিকে সহস্র বর্ষ চোখ মেলিয়া থাকিলেও এ সত্যের সাক্ষাৎ মিলিবে না, কমল তাহ বুঝিল । সেই বুদ্ধির যাচাই, সেই হিতাহিতবোধ, সেই ভাল-মন্দ সুখদুঃখের অতি-সতর্ক হিসাব, সেই মজবুত বনিয়াদ গড়ার ইঞ্জিনীয়ার ডাকা । অঙ্ক কবিয়া ইহারা ভালবাসার ফল বাহির করিতে চায়। নিজের জীবনে আগুবাবু পত্নীকে একান্তভাবে ভালবাসিয়াছিলেন । বহুদিন তিনি লোকান্তরিত, তথাপি আজও হয়ত তাহার মূল অস্তরে শিথিল হয় নাই–সংসারে ইহার তুলনা বিরল, এ-সবই সত্য, তবুও ইহারা ভিন্ন-জাতীয়। • ইহার ভাল-মন্দর প্রশ্ন তুলিয়া তর্ক করার মত নিস্ফলতা আর নাই। দাম্পত্যজীবনে একটাদিনের জন্যও পত্নীর সহিতৃ আপ্তবাবুর মতভেদ ঘটে নাই, অন্তরে মালিন্ত ম্পর্শ করে নাই। নির্কিবল্প শান্ত ও অবিচ্ছিন্ন আরামে যাহাঁদের দীর্ঘ বিবাহিত জীবন কাটিয়াছে তাহার গৌরব ও মাহাত্ম্যকে খৰ্ব্ব করিবে কে? সংসার মুগ্ধচিত্তে ইহার স্তবগান করিয়াছে, এমনি দুর্লভ কাহিনী লিপিবদ্ধ করিয়া কবি অমর হইয়াছে, স্বকীয় ২৩৪