পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/২৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শৈধ প্রশ্ন জীবনে ইহাকেই লাভ করিবার ব্যাকুলিত বাসনায় মানুষের লোভের অন্ত নাই। যাহার নিঃসন্দিগ্ধ মহিমা স্বতঃসিদ্ধ প্রতিষ্ঠায় চিরদিন অবিচলিত, তাহাকে তুচ্ছ করিবে কমল কোন স্পৰ্দ্ধায় ? কিন্তু মণি? যে দুঃশীল দুর্তাগার হাতে আপনাকে বিসর্জন দিতে সে উদ্যত, তাহার সব-কিছু জানিয়াও সমস্ত জানার বাহিরে পা বাড়াইতে আজ তাহার ভয় নাই। দুঃখময় পরিণাম-চিন্তায় পিতা শঙ্কিত, বন্ধুগণ বিষন্ন, কেবল সে-ই শুধু একাকী শঙ্কাহীন। আপ্তবাবু জানেন এ-বিবাহে সন্মান নাই, শুভ নাই, বঞ্চনার পরে ইহার ভিত্তি, এ স্বল্পকালব্যাপী মোহ যেদিন টুটিবে তখন আজীবন লজ্জ ও দুঃখ রাখিবার ঠাই রহিবে না—হয়ত সবই সত্য, কিন্তু সব গিয়াও এই প্রবঞ্চিত মেয়েটির যে-বস্তু বাকি থাকিবে সে যে পিতার শাস্তি-সুখময় দীর্ঘস্থায়ী দাম্পত্য-জীবনের চেয়ে বড় এ-কথা আগুবাবুকে সে কি দিয়া বুঝাইবে ? পরিণামটাই যাহার কাছে মূল্যনিরূপণের একমাত্র মানদও, তাহার সঙ্গে তর্ক চলিবে কেন ? কমলের একমাত্র ইচ্ছা হইল বলে, আশুবাবু, মোহমাত্রই মিথ্যা নয়, কন্যার চিত্তাকাশে মুহূর্বে উদ্ভাসিত তড়িৎরেখাও হয়ত পিতার অনিৰ্ব্বাপিত দীপ-শিখাকে দীপ্তি ও পরিমাপে অতিক্রম করিতে পারে, কিন্তু কিছুই না বলিয়া সে নীরবে বসিয়া রহিল। পিতার কৰ্ত্তব্য সম্বন্ধে অত্যন্ত স্পষ্ট অভিমত প্রকাশ করিয়া আণ্ডবাবু উত্তরের অপেক্ষায় অধীর হইয়া ছিলেন, কিন্তু কমল নিরুত্তর নতমুখে তেমনি বসিয়া আছে ; বেশ বুঝা গেল এ লইয়া সে আর বাদামুবাদ করিতে চাহে না । কথা নাই ৱলিয়া নয়, প্রয়োজন নাই বলিয়া । কিন্তু এমন করিয়া একজন মৌনাবলম্বন করিলে তো অপরের মন শাস্তি মানে না। বস্তুতঃ এই প্রৌঢ় মানুষটির গভীর অন্তরে সত্যের প্রতি একটি সত্যকার নিষ্ঠা আছে, একমাত্র সন্তানের দুর্দিনের আশঙ্কায় লজ্জিত, উদভ্ৰান্ত চিত্ত র্তাহার, মুখে যাই কেন না বলুন, জোর আছে বলি উদ্ধত স্পৰ্দ্ধায় জোর খাটানোর প্রতি তাহার গভীর বিতৃষ্ণ। কমলকে তিনি বব বুধিয়াছেন ততই তাহার বিস্ময় ও শ্রদ্ধা বাড়িয়াছে। লোকচক্ষে সে হেয়, নিন্দিত ; ভদ্র-সমাজে পরিত্যক্ত, সভায় ইহার নিমন্ত্রণ জুটে না, অথচ এই মেয়েটির নিঃশব্দ অবজ্ঞাকেই র্তাহার সবচেয়ে ভয়, ইহার কাছেই তাহার সঙ্কোচ ঘুচে না । বলিলেন, কম-;ে তোমার বাবা যুরোপিয়ান, তবু তুমি কখনো সেদেশে যাওনি। " কিন্তু তাদের মধ্যে আমার বহুদিন কেটেচে, তাদের অনেক-কিছু চোখে দেখেচি। অনেক ভালবাসার বিবাহ-উৎসবে যখন ডাক পড়েচে, আনন্দের সঙ্গে যোগ দিয়েচি, অর্ণবার সে-বিবাহ যখন অনাদরে উপেক্ষায় অনাচারে অত্যাচারে ভেঙেচে তখনও চোখ মুছেচি। তুমি গেলেও ঠিক এমনি দেখতে পেতে । , ২৩৫ آپ 5 سRھ