পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/২৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎসাহিত্য-সংগ্রহ ” কমল মুখ তুলিয়া বলিল, না গিয়েও দেখতে পাই আপ্তবাবু। ভাঙার নজির সেদেশে প্রত্যহ পুঞ্জিত হয়ে উঠচে, ওঠবারই কথা, এও যেমন সত্যি, ওর থেকে তার স্বরূপ বুঝতে যাওয়াও তেমনি ভুল ; ওটা বিচারের পদ্ধতিই নয় আপ্তবাবু। s আগুবাবু নিজের ভ্রম বুঝিয়া কিছু অপ্রতিভ হইলেন, এমন করিয়া ইহার সহিত তর্ক চলে না ; বলিলেন, সে যাক, কিন্তু আমার এই দেশটার পানে একবার ভাল করে চেয়ে দেখ দিকি । যে-প্রথা আবহমানকাল ধরে চলে আসচে তার স্বষ্টিকৰ্ত্তাদের দূরদর্শিতা। এখানে দায়িত্ব পাত্র-পাত্রীদের পরে নেই, আছে বাপ-মা গুরুজনদের পরে। তাই বিচার-বুদ্ধি এখানে আকুল-অসংযমে ঘুলিয়ে ওঠে না, একটা শান্ত অবিচলিত মঙ্গল তাদের চির-জীবনের সঙ্গী হয়ে যায়। কমল কহিল, কিন্তু মণি তো মঙ্গলের হিসেব করতে বসেনি আগুবাবু, সে চেয়েচে ভালবাসা । একটার হিসেব গুরুজনের স্বযুক্তি দিয়ে মেলে, কিন্তু অষ্ঠটার হিসেব হৃদয়ের দেবতা ছাড়া আর কেউ জানে না । কিন্তু তর্ক করে আপনাকে আমি মিথ্যে উত্ত্যক্ত করচি ; যার ঘরে পশ্চিমের জানালা ছাড়া আর সকল দিকই বন্ধ, সে স্বর্ঘ্যের প্রত্যুষের আবির্ভাব দেখতে পায় না, দেখতে পায় শুধু তার প্রদোষের অবসান। কিন্তু সেই চেহারা আর রঙের সাদৃপ্ত মিলিয়ে তর্ক করতে থাকলে শুধু কথাই বাড়বে, মীমাংসায় পৌঁছুবে না। আমার কিন্তু রাত হয়ে যাচ্চে, আজ আসি । নীলিমা বরাবর চুপ করিয়াই ছিল, এতক্ষণে এত কথার মধ্যে একটি কথাও যোগ করে নাই, এখন করিল, আমিও সব কথা তোমার স্পষ্ট বুঝতে পারিনি কমল, কিন্তু এটুকু অনুভব করচি যে, ঘরের অন্যান্য জানালাগুলো খুলে দেওয়া চাই। এ তে চোখের দোষ নয়, দোষ বন্ধ বাতায়নের। নইলে যে-দিকটা খোলা আছে সেদিকে দাড়িয়ে '; চেয়ে থাকলেও এ-ছাড়া কোন-কিছুই কোনদিন চোখে পড়বে না। ট্র [. কৰ্মল উঠিয় দাড়াইতে আগুবাবু ব্যাকুলকণ্ঠে বলিয়া উঠিলেন, যেয়ে না কমল, আর একটুখানি ব’লো। মুখে অল্প নেই, চোখে ঘুম নেই, অবিশ্রাম বুকের ভেতরটায় যে কি করচে সে তোমাকে আমি বোঝাতে পারবো না । তবু আর একবার চেষ্টা করে দেখি তোমার কথাগুলো যদি সত্যিই বুঝতে পারি। তুমি কি যথার্থ-ই বলচ আমি চুপ করে থাকি, আর এই কুন্ত্র ব্যাপারটা হয়ে যাক ? কমল বলিল, মণি যদি তাকে ভালবেসে থাকে আমি তা কুত্র বলতে পারিনে। কিন্তু এইটেই যে তোমাকে একশোবার বোঝাতে চাচ্চি কমল, এ মোহ, এ ভালবাসা নয়, এ-ভুল তার ভাঙবেই। 贴 ২৩৬