পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/২৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ দিয়েচেন, সংস্কারের দিক দিয়েও যদি তাকে এমনি পরিত্যাগ করতে পারতেন, এ-কথা উপলব্ধি করা আজ কঠিন হ’তে না যে, ভাবের জন্য বিশেষত্বের জন্য মানুষ নয়, মামুষের জন্যই তার সমাদর, মানুষের জন্যই তার দাম । মানুষই যদি তলিয়ে যায়, কি হবে তারণ তত্বের মহিমা-প্রতিষ্ঠায় ? নাই বা হ’লো ভারতের মতের জয়, মানুষের জয় তো হবে ? তখন মুক্তি পেয়ে এতগুলি নর-নারী ধন্ত হয়ে যাবে। চেয়ে দেখুন তো নবীন তুর্কীর দিকে। যতদিন সে তার প্রাচীন রীতি-নীতি, আচার-অনুষ্ঠান, পুরুষ-পরম্পরাগত পুরানো পথটাকেই সত্য জেনে আঁকড়ে ধরেছিল, ততদিন তার হয়েচে বারংবার পরাজয়। আজ বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে সে সত্যকে পেয়েচে, তার সমস্ত আবর্জনা ভেসে গেছে ; আজ তাকে উপহাস করে সাধ্য কার? অথচ সেই প্রাচীন মত ও পথই একদিন দিয়েছিল তারে বিজয়, দিয়েছিল ঐশ্বৰ্য্য, কল্যাণ, দিয়েছিল মচুন্যত্ব । ভেবেছিল, সেই বুঝি চিরন্তন সত্য। ভেবেছিল, তাকেই প্রাণপণে আঁকড়ে ধরে বিগত গৌরব আবার আজকের দিনেও ফিরিয়ে আনতে পারবে । মনেও করেনি তার বিবর্তন আছে। আজ সেই মোহ গেল মরে, কিন্তু ওদের মানুষগুলো উঠলো বেঁচে । এমন দৃষ্টান্ত আরও আছে, আরও হবে। সতীশবাবু, আত্ম-বিশ্বাস এবং আত্মঅহঙ্কার এক বস্তু নয় । সতীশ বলিল, জানি । কিন্তু পশ্চিমের লোকেরাই যে মামুষের প্রশ্নের শেষ জবাব দিয়েচে এণ্ডু তো না হতে পারে ? তাদের সভ্যতাও একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে এও তো সম্ভব ? কমল মাথা নাড়িয়া কহিল, ই সম্ভব । আমার বিশ্বাস হবেও । তবে ? কমল বলিল, তাতে ধিক্কার দেবার কিছু নেই। সতীশবাবু, মন্দ তো ভালর শত্ৰু নয়, ভলির শত্রু তার চেয়ে যে আরও ভাল সে, সেই আরও ভাল যেদিন উপস্থিত হয়ে প্রশ্নের জবাব চাইবে সেদিন তারই হাতে রাজদণ্ড তুলে দিয়ে ওকে সরে যেতে হবে। একদিন শক, হুনু, তাতারের দল ভারতবর্ষ গায়ের জোরে জয় করেছিল, কিন্তু এর সভ্যতাকে বাধতে পারেনি, তার আপনি বাধা পড়েছিল । এর কারণ কি জানেন ? আসল কারণ তারা নিজেরাই ছিল ছোট। কিন্তু মোগল-পাঠানের পরীক্ষা বাকী রয়ে গেল, ফরাসী-ইংরেজ এসে পড়ল বলে। সে মিয়াদ আজও বাজেয়াপ্ত হয়নি। ভারতের কাছে এর জবাব একদিন তাদের দিতেই হবে। সে-প্রশ্ন থাক, কিন্তু পশ্চিমের জ্ঞান-বিজ্ঞান-সভ্যতার কাছে ভারতবর্ষ আজ যদি ধরা দেয়, দত্ত্বে আঘাত লাগবে, কিন্তু তার কল্যাণে বা পড়বে না আমি নিশ্চয় বলতে পারি। ९8b”