পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/২৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বামী মামা আশ্চৰ্য্য হয়ে বলতেন, বলিস কি গিরি, তোর মেয়ে ত এখনো বারে পেরোয়নি, এর মধ্যেই তোর—সাহেবদের মেয়েরা ত এ বয়সে— * ম কাজ কঁাদ গলায় জবাব দিতেন, সাহেবদের কথা কেন তুলচ দাদা, আমরা ত সত্যিই আর সাহেব নই। ঠাকুর-দেবতা না মানো, তারা কিছু আর ঝগড়া করতে আসচেন না, কিন্তু পাড়াগায়ের সমাজ ত আছে ? তাকে উড়িয়ে দেবে কি করে ? মামা হেসে বলতেন, ভাবিসনে বোন, সে-সব আমি জানি। এই যেমন তোকে হেসে উড়িয়ে দিচ্চি, ঠিক এমনি করে আমাদের নচ্ছার সমাজটাকেও হেসে উড়িয়ে দেব। মা মুখ ভার করে বিড় বিড় করে বকতে বকতে উঠে যেতেন। মামা গ্রাহ করতেন না বটে, কিন্তু আমার ভারি ভয় হ’ত । কেমন করে যেন বুঝতে পারতুম, মামা যাই বলুন, মার কাছ থেকে আমাকে তিনি রক্ষণ করতে পারবেন না । কেন যে বিয়ের কথায় ভয় হতে সুরু হয়েছিল, তা বলচি । আমাদের পশ্চিমপাড়ার বুক চিরে যে নালাটা গ্রামের সমস্ত বর্ষার জল নদীতে ঢেলে দিত, তার দু’পাড়ে যে দু’ঘরের বাস ছিল, তার এক ঘর আমরা, অন্ত ঘর গ্রামের জমিদার বিপিন মজুমদার। এই মজুমদার-বংশ যেমন ধনী তেমনি ছৰ্দান্ত । গায়ের ভেতরে-বাইরে এদের প্রতাপের সীমা ছিল না । নরেন ছিল এই বংশের একমাত্র বংশধর । আজ এতবড় মিথ্যেটা মুখে আনতে আমার যে কি হচ্চে, সে মামার অন্তর্যামী ছাড়া আর কে জানবে বল ; কিন্তু তখন ভেবেছিলুম, এ বুঝি সত্যি একটা জিনিস– সত্যিই বুঝি নরেনকে ভালবাসি । 劇 縣 কবে যে এই মোহটা প্রথম জন্মেছিল, সে আমি বলতে পারি না । কলকাতায় সে বি-এ পড়ত, কিন্তু ছুটির সময় বাড়ি এলে মামার সঙ্গে ফিলজফি আলোচনা করতে প্রায়ই আসত। তখনকার দিনে Agnosticismই ছিল বোধ করি লেখাপড়াজানাদের ফ্যাস্তান। এই নিয়েই বেশিভাগ তর্ক হত । কতদিন মামা তার গৌরব দেখাবার জন্ত নরেনবাবুর তর্কের জবাব দিতে আমাকে ডেকে পাঠাতেন। কতদিন সন্ধ্যা ছাড়িয়ে রাত্রি হয়ে যেত, দু’জনের তর্কের কোন মীমাংসা হ’ত না। কিন্তু আমিই প্রায় জিততুম, তার কারণও আজ আর আমার অবিদিত নেই। * মাঝে মাঝে সে হঠাৎ তর্কের মাঝখানে ভঙ্গ দিয়ে মামার মুখপানে চেয়ে গতীর বিস্ময়ে বলে উঠত, আচ্ছ ব্ৰজবাবু, এই বয়সে এত বড় লজিকের জ্ঞান, ՀեՓ el=eNe