পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/২৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বামী কেউ নেই, খুটি ঠেস দিয়ে দাড়িয়ে মেঘের পানে চেয়ে ভাবচি, ঝম্ বম্ করে ছুটে এসে কে ঢুকে পড়ল। মুখ ফিরিয়ে চেয়ে দেখি–ওমা ! এ ষে নরেনবাবু! .কলকাতা থেকে তিনি যে বাড়ি এসেচেন, কৈ সে ত আমি শুনিনি । আমাকে দেখে চমকে উঠে বললেন, র্য্য, সন্ধু যে ! এখানে ? অনেকদিন তাকে দেখিনি, অনেকদিন তার গলা শুনিনি, আমার বুকের মধ্যে যেন আনন্দের ঢেউ বয়ে গেল। কান পৰ্য্যন্ত লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠল, মুখের পানে চেয়ে ত জবাব দিতে পারলুম না, মাটির দিকে চেয়ে বললুম, আমি ত রোজই ফুল কুড়তে আসি। কবে এলেন ? - নরেন মালীদের একটা ভাঙা খাটিয়া টেনে নিয়ে বসে বললে, আজ সকালে । কিন্তু তুমি কার হুকুমে ফুল চুরি কর শুনি ? গম্ভীর গলায় আশ্চৰ্য্য হয়ে হঠাৎ মুখ তুলে দেখি, চোখ দুটো তার চাপা হাসিতে নাচচে । * লজ্জা ! লজ্জা ! এই পোড়ার মুখেও কোথা থেকে হালি এলে পড়ল, বললুম, তাই বই কি ! কষ্ট করে কুড়িয়ে নিলে বুঝি চুরি করা হয় ? নরেন ফস করে দাড়িয়ে উঠে বললে, আর আমি যদি ঐ কুড়ানো ফুলগুলো তোমার কোচড়ের ভেতর থেকে আর একবার কুড়িয়ে নিই, তাকে কি বলে ? জানিনে, কেন আমার ভয় হ’ল, সত্যিই যেন এইবার সে এসে আমার আঁচল চেপে ধরবে। হাতের মুঠ আমার আলগা হয়ে গিয়ে চোখের পলকে সমস্ত ফুল ঝপ করে মাটীতে পড়ে গেল । ও কি করলে ? আমি কোনমতে আপনাকে সামলে নিয়ে বললুম, আপনাদেরই ত ফুল, বেশ ত, নিন্‌ না কুড়িয়ে । এ ! এত অভিমান ! বলে সে উঠে আমার আঁচলটা টেনে নিয়ে ফুল কুড়িয়ে কুড়িয়ে রাখতে লাগল। কেন জানিনে, হঠাৎ আমার দু'চোখ জলে ভরে গেল, আমি জোর করে মুখ ফিরিয়ে আর একদিকে চেয়ে রইলুম। সমস্ত ফুলগুলি কুড়িয়ে আমার আঁচলে একটা গেরো দিয়ে নরেন তার জায়গায় ফিরে গেল। খানিকক্ষণ আমার পানে চুপ করে চেয়ে থেকে বললে, যে ঠাট্ট বুঝতে পারে না, এত অল্পে রাগ করে, তার ফিলজফি পড়া কেন ? আমি কালই গিয়ে ব্ৰজবাবুকে বলে দেব, তিনি আর যেন পণ্ডশ্রম না করেন। আমি আগেই চোখ মুছে ফেলেছিলুম, বললুম, কে রাগ করেচে ? o Հե (է