পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ মনোরম বুঝিল এ তাহারই প্রতি অন্তযোগ, কহিল, আচ্ছ, বাবা, তাই হবে । আপ্তবাবু হাসিয়া বলিলেন, হওয়াটাই কি সহজ মা ? কারণ, কি যে হওয়া উচিত সে ধারণা আমারও বেশ স্পষ্ট নেই, কেবল এই কথাটাই মনে হচ্ছে, শিবনাথ যেন না আমাদের গৃহে দুঃখ পায়। মনোরম কি একটা বলিতে যাইতেছিল, হঠাৎ চকিত হইয়া কহিল, এই যে এর আসচেন । আপ্তবাবু ব্যস্ত হইয়া বাহিরে আসিলেন—বেশ যা হোক শিবনাথবাবু, ভিজে যে একেবারে— শিবনাথ কহিলেন, ই, হঠাৎ জলটা একেবারে চেপে এল, তা আমার চেয়ে ইনিই ভিজেচেন ঢের বেশি। এই বলিয়া সঙ্গের মেয়েটিকে দেখাইয়া দিলেন। কিন্তু মেয়েটি যে কে এ পরিচয় তিনিও স্পষ্ট করিয়া দিলেন না, ইহারাও সে কথা স্পষ্ট করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন না । বস্তুতঃ মেয়েটির সমস্ত দেহে শুষ্ক বলিয়া আর কোন কিছু ছিল না। জামকাপড় ভিজিয়া ভারি হইয়া উঠিয়াছে, মাথার নিবিড় কৃষ্ণ কেশের রাশি হইতে জলধারা গণ্ড বহিয়া ঝরিয়া পড়িতেছে—পিতা ও কন্যা এই নবাগত রমণীর মুখের প্রতি চাহিয়া অপরিসীম বিস্ময়ে নিৰ্ব্বাক হইয়া রহিলেন। আগুবাবু নিজে কবি নহেন, কিন্তু তাহার প্রথমেই মনে হইল এই নারী-রূপকেই বোধ হয় পূৰ্ব্বকালের কবির শিশির-ধোয় পদ্মের সহিত তুলনা করিয়া গিয়াছেন এবং জগতে এত বড় সত্য তুলনাও হয়ত আর নাই। সেদিন অক্ষয়ের নানাবিধ প্রশ্নের উত্তরে শিবনাথ উত্যক্ত হইয়া যে জবাব দিয়াছিলেন, তিনি লেখা-পড়া জানার জন্য বিবাহ করেন নাই, করিয়াছেন রূপের জন্ত, কথা যে কি পরিমাণে সত্য তখন তাহাতে কেহ কোন কান দেয় নাই, এখন স্তব্ধ হইয়া আণ্ডবাবু শিবনাথের সেই কথাটাই বারংবার স্মরণ করিতে লাগিলেন। র্তাহার মনে হইল, বাস্তবিক, জীবন-যাত্রার প্রণালী ইহাদের ভদ্র ও নীতি-সন্মত নাই হোক, পতি-পত্নী সম্বন্ধের পবিত্রতা ইহাদের মধ্যে না-ই থাকুক, কিন্তু এই নশ্বর জগতের তেমনি নশ্বর এই দুটি নরনারীর দেহ আশ্রয় করিয়া স্বষ্টির কি অবিনম্মর সত্যই না ফুটিয়াছে! আর পরমাশ্চৰ্য্য এই, যেদেশে রূপ বাছিয়া লইবার কোন বিশিষ্ট পন্থা নাই, যেদেশে নিজের চক্ষুকে রুদ্ধ রাধিয়া অপরের চক্ষুকেই নির্ভর করিতে হয়, সে অন্ধকারে ইহার পরস্পরের সংবাদ পাইল কি করিয়া ? কিন্তু এই মোহাচ্ছন্ন ভাবটা কাটিয়া যাইতে র্তাহার মুহূৰ্ত্তকালের অধিক সময় লাগিল না। ব্যস্ত হইয়া বলিলেন, শিবনাথবাৰু, ভিজে কাপড়-জামাটা ছেড়ে ফেলুন। যদু, আমার বাথরুমে বাবুকে নিয়ে যা । ૨૦