পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/৩০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সং ত বিয়ের কনের পক্ষে সতের বছর একটা মারাত্মক অপরাধ, তার উপর এই দীর্ঘ গড়নটা যেন তাকেও ডিঙ্গিয়ে গিয়েছিল । অন্ততঃ সে রাতটার জন্তও যদি আমাকে কোনরকম মুচড়ে মাচড়ে একটু থাটো করে তুলতে পারতেন, মা বোধ করি তাতেও পেছতেন না। কিন্তু সে ত হবার নয়। আমি আমার স্বামীর বুক ছাড়িয়ে একেবারে দাড়ির কাছে গিয়ে পৌছলুম। কিন্তু শুভদৃষ্টি হ’ল না, আমি ঠিক রাগে নয়, কেমন যেন একটা বিতৃষ্ণায় চোখ বুজে রইলুম। কিন্তু তাও বলি, এমন কোন অসহ মৰ্ম্মান্তিক দুঃখও তখন আমি মনের মধ্যে পাইনি। ইতিপূৰ্ব্বে কতদিন সারারাত্রি জেগে ভেবেচি, এমন দুর্ঘটনা যদি সত্যিই কপালে ঘটে, নরেন এসে আমাকে না নিয়ে যায়, তবু আর কারও সঙ্গে আমার বিয়ে কোনমতেই হতে পারবে না। সে-রাত্রে নিশ্চয আমার বুক চিরে ভলকে ভলকে রক্ত মুখ দিয়ে গড়িয়ে পড়বে, ধরাধরি করে আমাকে বিবাহ-সভা থেকে বিছানায় তুলে নিয়ে যেতে হবে, এ বিশ্বাস আমার মনে একেবারে বদ্ধমূল হয়েছিল। কিন্তু কৈ কিছুই ত হ’ল না। আরও পাচজন বাঙালীর মেয়ের যেমন হয় শুভকৰ্ম্ম তেমনি করে আমারও সমাধা হয়ে গেল এবং তেমনি করেই একদিন শ্বশুরবাড়ি যাত্রা করলুম। শুধু যাবার সময়টিতে পান্ধীর ফাক দিয়ে সেই কাটালী-চাঁপার কুঞ্জটায় চোখ পড়ায় হঠাৎ চোখে জল এল। সে যে আমাদের কতদিনের কত চোখের জল, কত দিব্যিদিলাশীর নীরব সাক্ষী । আমার চিতোর গ্রামের সম্বন্ধটা যেদিন পাকা হয়ে গেল, ওই গাছটার আড়ালে বসেই অনেক আশ্র-বিনিময়ের পর স্থির হয়েছিল, সে এসে একদিন আমাকে নিয়ে চলে যাবে। কেন, কোথায় প্রভৃতি বাহুল্য প্রশ্নের তখন আবশ্যক হয়নি। আর কিছু না, শুধু যাবার সময় একবার যদি দেখা হত ! কেন সে আমাকে আর চাইলে না, কেন অার একটাদিনও দেখা দিলে না, শুধু যদি খবরটা পেতুম। শ্বশুরবাড়ি গেলুম, বিয়ের বাকি অনুষ্ঠানও শেষ হয়ে গেল। অর্থাৎ আমি আমার স্বামীর ধৰ্ম্মপত্নীর পদে এইবার পাকা হয়ে বসলুম। দেখলুম স্বামীর প্রতি বিতৃষ্ণ শুধু এক আমার নয়। বাড়িগুদ্ধ আমার দলে । খgর নেই, সং-শাশুড়ী তার নিজের ছেলে দুটি, একটি বেী এবং বিধবা মেয়েটি নিয়ে ব্যতিব্যস্ত। এতদিন নিরাপদে সংস্কার করছিলেন, হঠাৎ একটা সতের-আঠার বছরের মস্ত বেী দেখে তার সমস্ত মন সশস্ত্র জেগে উঠল। কিন্তু মুখে বললেন, বঁাচলুম বেীমা, তোমার হাতে সংসার ফেলে দিয়ে এখন দু’দও ঠাকুরদের নাম করতে ←❍8