পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/৩১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বামী তৰু তর্ক করতে যাচ্ছিলুম, কিন্তু হঠাৎ তার মুখপানে চেয়ে আর আমার মুখে কথা যোগাল না । ভগবানের ওপর তার অচল বিশ্বাস আমি জানতুম, কিন্তু কোন মানুষ যে আর একজনের মুখ থেকে তার অস্বীকার শুনলে এত ব্যথা পেতে পারে, এ ধারণাই আমার ছিল না। এই নিয়ে মামার বসবার ঘরে অনেক তর্ক নিজেও করেচি, অপরকেও করতে শুনেচি, রাগারগি হয়ে যেতে বহুবার দেখেচি, কিন্তু এমন বেদনায় বিবর্ণ হয়ে যেতে কাউকে দেখিনি। আমি নিজেও ব্যথা বড় কম পেলুম না, কিন্তু কোন তর্ক না করে এভাবে আমার মুখ বন্ধ করে দেওয়ায় অপমানে আমার মাথা হেঁট হয়ে গেল। কিন্তু ভাবি, আমার অপমানের পালাটা এর ওপর দিয়েই কেন সেদিন শেষ হ’ল না । যে মাচুরটা পেতে আমি নীচে শুতুম, সেটা ঘরের কোণে গুটানো থাকত ; আজ কে সরিয়ে রেখেছিল বলতে পারিনে। খুজে পাচ্ছিনে দেখে, তিনি নিজে বিছানা থেকে একটা তোষক তুলে বললেন, আজ এইটে পেতে শোও । এত রাত্রে কোথা আর খুঁজে বেড়াবে বল ? র্তার কণ্ঠস্বরে বিক্রপ-ব্যঙ্গের লেশমাত্র ছিল না। তবুও কথাটা যেন অপমানের শূল হয়ে আমার বুকে বিধল। রোজ ত আমি নীচেই শুই । সামান্য একথান মাদুর পেতে যেমন-তেমনভাবে রাত্রি যাপন করাটাই ত ছিল আমার সবচেয়ে বড় গৰ্ব্ব। কিন্তু স্বামীর ছোট দুটি কথায় যে আজ আমার সেই গৰ্ব্ব ঠিক তত বড় লাঞ্ছনায় রূপান্তরিত হয়ে দেখা দেবে, এ কে ভেবেছিল ? অন্যত্র শোবার উপকরণ স্বামীর হাত থেকেই হাত পেতে নিলুম, কিন্তু শোবামাত্রই কান্নার ঢেউ যেন আমার গলা পৰ্য্যন্ত ফেনিয়ে উঠল। জানিনে, তিনি শুনতে পেয়েছিলেন কি না । সকাল হতে না হতেই তাড়াতাড়ি বিছানা তুলে ঘর থেকে পালাবার চেষ্টা করচি, তিনি ডেকে বললেন, আজ এত ভোরে উঠলে যে ? বললুম, ঘুম ভেঙে গেল, তাই বাইরে যাচ্ছি। বললেন, একটা কথা আমার শুনবে ? রাগে, অভিমানে সৰ্ব্বাঙ্গ ভরে গেল, বললুম, তোমার কথা কি আমি শুনিনি ? আমার মুখপানে চেয়ে তিনি একটু হেসে বললেন, শোন, আচ্ছ তা হলে কাছে এস, বলি । বললুম, আমি ত কাল নই, এখানে দাড়িয়েই শুনতে পাব। পাবে না গো, পাবে না, বলেই হঠাৎ তিনি স্বমুখে ঝুকে পড়ে আমার হাতটা ধরে ফেললেন। আমি জোর করে ছাড়াতে গেলুম, কিন্তু তার সঙ্গে পারব কেন, Ve\రి