পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/৩১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বামী তিনি ভেতরে ভেতরে কত ভালবেলেচেন, সে ত আমি অসংশয়ে অনুভব করতে পারি, কিন্তু সে ভালবাসার ওপর এতটুকু জোর খাটাবার সাহস আমার ত হয় না। * একদিন কথায় কথায় বলেছিলুম, আচ্ছা, তুমিই বাড়ির সর্বস্ব, কিন্তু তোমাকে যে বাড়িগুদ্ধ সবাই অযত্ন অবহেলা করে, এমন কি অত্যাচার করে, এ কি তুমি ইচ্ছা করলে শাসন করে দিতে পার না ? - তিনি হেসে জবাব দিয়েছিলেন, কৈ কেউ ত অযত্ন করে না । . কিন্তু আমি নিশ্চয় জানতুম, কিছুই তার অবিদিত ছিল না। বললুম, আচ্ছ, যত বড় দোষই হোক, তুমি কি সব মাপ করতে পার ? 驢 তিনি তেমনি হাসিমুখে বললেন, যে সত্যি ক্ষমা চায়, তাকে করতেই হবে, এ যে আমাদের মহাপ্রভুর আদেশ গো ! তাই এক-একদিন চুপ করে বসে ভাবতুম, ভগবান যদি সত্যি নেই, তা হলে এত শক্তি, এত শান্তি ইনি পেলেন কোথায় ? এই যে আমি স্ত্রীর কর্তব্য একদিনের জন্তে করিনে, তবু ত তিনি কোনদিন স্বামীর জোর নিয়ে আমায় অমৰ্য্যাদা অপমান করেন না ? 劇 আমাদের ঘরের কুলুঙ্গিতে একটি শ্বেত-পাথরের গৌরাঙ্গমূৰ্ত্তি ছিল ; আমি কত রাত্রে ঘুম ভেঙ্গে দেখেচি, স্বামী বিছানার উপর স্তব্ধ হয়ে বসে একদৃষ্টে তার পানে চেয়ে আছেন, আর দু’চক্ষু দিয়ে অশ্রীর ধারা বয়ে যাচ্ছে। সময়ে সময়ে তার মুখ দেখে আমারও যেন কান্না আসত, মনে হত, অমনি করে একটাদিনও কঁদিতে পারলে বুঝি মনের অৰ্দ্ধেক বেদন কমে যাবে। পাশের কুলুঙ্গিতে র্তার খানকয়েক বড় আদরের বই ছিল, তার দেখাদেখি আমিও মাঝে মাঝে পড়তুম। লেখাগুলো যে আমি সত্যি বলে বিশ্বাস করতুম তা নয়, তবুও এমন কতদিন হয়েচে, কখন পড়ায় মন লেগে গেছে, কখন বেলা বয়ে গেছে, কখন দু’ফোটা চোখের জল গড়িয়ে গালের উপর শুকিয়ে আছে, কিছুই ঠাওর পাইনি। কতদিন হিংসে পৰ্য্যস্ত হয়েচে, তার মত আমিও যদি এগুলি সমস্ত সত্যি বলেই ভাবতে পারতুম ! কিছুদিন থেকে আমি বেশ টের পেতুম, কি একটা ব্যথা যেন প্রতিদিনই আমার বুকের মধ্যে জমা হয়ে উঠছিল। কিন্তু কেন, কিসের জন্তে, তা কিছুতে হাতড়ে পেতুম না। শুধু মনে হ’ত আমার যেন কেউ কোথাও নেই। ভাবতুম, মায়ের জন্যেই বুঝি ভেতরে ভেতরে মন-কেমন করে, তাই কতদিন ঠিক করেচি, কালই পাঠিয়ে দিতে বলব, কিন্তু যেই মনে হ’ত এই ঘরটি ছেড়ে আর কোথাও যাচ্ছি, না, অমনি সমস্ত সঙ্কল্প কোথায় যে ভেসে যেত, তাকে মুখ ফুটে বলাও হ’ত না । \లిaఏ .