পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/৩২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বামী প্রদীপের ক্ষীণ আলোতে স্পষ্ট দেখতে পেলুম, তার মুখখানি যেন শাদা হয়ে গেল । বললেন, না না, তোমার কিছু গয়না আমি ভিক্ষে চাচ্ছি, আমার টাকার বড় অনটন, তাই বাধা দেব। 朝 輸 聯 কিন্তু এমনি পোড়াকপালী আমি যে, ও-মুখ দেখেও কথাটা বিশ্বাস করতে পারলুম না। বললুম, বাধা দাও, বেচে ফেল, যা ইচ্ছে কর, তোমাদের গয়নার ওপর আমার এতটুকু লোভ নেই। বলে, তখুনি বাক্স খুলে আমার সমস্ত গয়না বিছানার ওপর ছুড়ে ফেলে দিলুম। যে দু’গাছি বালা মা দিয়েছিলেন, সেই ছুটি ছাড়া গা থেকে পর্যন্ত গয়না খুলে ফেলে দিলুম। তাতেও তৃপ্তি হ’ল না, বেনারসী কাপড় জামা প্রভৃতি যা কিছু এরা দিয়েছিলেন, সমস্ত বার করে টান মেরে ফেলে দিলুম। স্বামী পাথরের মত স্থির নির্বাক্ হয়ে বসে রইলেন। আমার ঘৃণায় বিতৃষ্ণায় সমস্ত মনটা এমনি বিষিয়ে উঠল যে, এক ঘরের মধ্যে থাকাও অসহ্য হয়ে পড়ল। বেরিয়ে এসে অন্ধকার বারানায় একধারে আঁচল পেতে শুয়ে পড়লুম। মনে হ’ল, দোরের অগড়াল থেকে কে যেন বেরিয়ে গেল । 圍 কান্নায় বুক ফেটে যেতে লাগল, তবু প্রাণপণে মুখে কাপড় ও জে দিয়ে মান বাচালুম। কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলুম জানিনে, উঠে দেখি, ভোর হয় হয়। ঘরে গিয়ে দেখি, বিছানা থালি, দু-একখানি ছাড়া প্রায় সমস্ত গয়নাই নিয়ে তিনি কখন্‌ বেরিয়ে গেছেন । সারাদিন তিনি বাড়ি এলেন না। রাত্রি বারোটা বেজে গেল, তার দেখা নাই। তন্দ্রার মধ্যেও বোধ করি সজাগ ছিলুম। রাত্রি দুটোর পর বাগানের দিকেই সেই জানালাটার গায়ে খটু খটু শব্দ শুনেই বুঝলুম, এ নরেন। কেমন করে যেন আমি নিশ্চয় জানতুম, আজ রাত্রে সে আসবে। স্বামী ধরে নেই, এ-খবর মুক্ত দেবেই এবং এ-সুযোগ সে কিছুতে ছাড়বে না । কোথাও কাছা-কাছি সে যে আছেই, এ যেন আমি ভারী অমঙ্গলের মত অনুভব করতুম। নরেন এত নিঃসংশয় ছিল যে, সে অনায়াসে বললে, দেরি কর না, যেমন আছ বেরিয়ে এস, মুক্ত খিড়কি খুলে দাড়িয়ে আছে। বাগান পার হয়ে রাস্তা দিয়ে অনেকখানি অন্ধকারে এগিয়ে গিয়ে গাড়ীতে গিয়ে বসলুম। মা বস্কমতি ! গাড়ীশুদ্ধ হতভাগীকে সেদিন গ্রাস করলে না কেন ? কলকাতায় বৌবাজারের একটা ছোট বাসায় গিয়ে যখন উঠলুম তখন বেলা সাড়ে-আটটা। আমাকে পৌছে দিয়েই নরেন তার নিজের বাসায় কিছুক্ষণের জন্য ర్శి}