পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/৩৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

একাদশী বৈরাগী ন হইলে সেখানের ধোপা, নাপিত, মুীও বন্ধ ! বারুইপুরের জমিদার ত দিদির , মামাশ্বশুর। 尊 ছেলের মাতিয়া উঠিল এবং অবিলম্বে ডোনেশনের খাতায় বৈরাগীর নামের পিছনে একটা মস্ত অঙ্কপাত হইয়া গেল। একাদশীর কাছে টাকা আদায় করা হইবে, ন হইলে অপূৰ্ব্ব তাহার দিদির মামাশ্বশুরকে বলিয় বারুইপুরেও ধোপা নাপিত বন্ধ করিবে, সংবাদ পাইয়া রসিক স্মৃতিরত্ন লাইব্রেরীর মঙ্গলার্থ উপযাচক হইয়া পরামর্শ দিয়া গেলেন যে, বেশ একটু মোটা টাকা না দিলে মহাপাপী ব্যাটা কালীদহে বাস্তু কি করিয়া রক্ষা করে, দেখিতে হইবে। কারণ, বাস না করিলেও এই বাস্তুভিটার উপর একাদশীর যে অত্যন্ত মমতা, স্মৃতিরত্বের তাহা অগোচর ছিল না। যে-হেতু বছর-দুই পুৰ্ব্বে এই জমিটুকু খরিদ করিয়া নিজের বাগানের অঙ্গীভূত করিবার অভিপ্রায়ে সবিশেষ চেষ্টা করিয়াও তিনি সফলকাম হইতে পারেন নাই । তাহার প্রস্তাবে তখন একাদশী অত্যন্ত সাধু ব্যক্তির ন্তায় কানে আঙুল দিয়া বলিয়াছিল, এমন অনুমতি করবেন না ঠাকুরমশাই, ঐ একফোটা জমির বদলে ব্রাহ্মণের কাছে দাম নিতে আমি কিছুতেই পারব না। ব্রাহ্মণের সেবায় লাগবে, এ ত আমার সাত-পুরুষের ভাগ্য। স্থতিরত্ব নিরতিশয় পুলকিত-চিত্তে তাহার দেব-দ্বিজে ভক্তিশ্রদ্ধার লক্ষকোটি মুখ্যাতি করিয়া অসংখ্য আশীৰ্ব্বাদ করার পরে, একাদশী করযোড়ে সবিনয়ে নিবেদন করিয়াছিল, কিন্তু এমনি পোড়া অদৃষ্ট ঠাকুরমশাই যে, সাত-পুরুষের ভিটে আমার কিছুতেই হাতছাড়া করবার জো নাই। বাবা মরণকালে মাথার দিব্যি দিয়ে বলে গিয়েছিলেন, খেতেও যদি না পাস বাবা, বাস্তুভিটে কখনো ছাড়িসনে । ইত্যাদি ইত্যাদি । সে আক্রোশ স্মৃতিরত্ব বিস্তৃত হন নাই । দিন-পাচেক পরে, একদিন সকালবেল এই ছেলের দলটি দুই ক্রোশ পথ ইটিয়া একাদশীর সদরে অসিয়া উপস্থিত হইল। বাড়িটি মাটর, কিন্তু পরিষ্কারপরিচ্ছন্ন। দেখিলে মনে হয়, লক্ষ্মীশ্ৰী আছে। অপূৰ্ব্ব কিংবা তাহার দলের আর কেহ একাদশীকে পূৰ্ব্বে কখনো দেখে নাই ; সুতরাং চণ্ডীমণ্ডপে পা দিয়াই তাহাদের মন বিতৃষ্ণায় ভরিয়া গেল। এ-লোক টাকার কুমীরই হোক, হাঙ্গরই হোক, লাইব্রেরীর সম্বন্ধে যে পুট মাছটির উপকারে আসিবে না, তাহ নিঃসন্দেহ। একাদশীর পেশা তেজারতি। বয়স ষাটের উপর গিয়াছে। সমস্ত দেহ যেমন শীর্ণ, তেমনি শুষ্ক । কণ্ঠভর তুলসীর মালা। দাড়ী-গোফ কামান, মুখখানার প্রতি চাহিলে মনে হয় না যে কোথাও ইহার লেশমাত্র রসকস আছে। ইক্ষু যেমন নিজের রস কলের পেষণে বাহির করিয়া দিয়া, অবশেষে নিজেই ইন্ধন হইয় তাহাকে জালাইয় শুষ্ক ৩২৯