পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/৩৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নারীর মূল্য পূজা করি” । সুতরাং কথার লড়াইয়ে তখনকার মত একরকম জিতিয়া যাই এবং মহু-পরাশর মাথায় করিয়া পরস্পরের পিঠ ঠুকিয়া দিয়া ঘরে ফিরিয়া আসি। অবশু সাহেবদের কাছে আমি হঠিতে বলি না, কিন্তু ঘরে ফিরিয়া দুই ভায়ে যদি বলাবলি করি, “ভায়া, পূজা ত করি, কিন্তু কিভাবে করি বল ত ?” তখন কিন্তু এমন অনেক কথাই বাহির হইয়া পড়িবার সম্ভাবনা যাহা বাহিরের লোকের কানে কিছুতেই তোলা চলে না। অতএব, আমাদের এটা নিভৃত আলোচনা । প্রথম, সতীত্বের বাড়া নারীর আর গুণ নাই। সব দেশের পুরুষই এ-কথা বোঝে, কেন না, এটা পুরুষের কাছে সবচেয়ে উপাদেয় সামগ্রী। এবং, স্বামীর অবাধ্য হওয়া,—তিনি অতি পাষণ্ড হইলেও—তাহাকে মনে মনে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার মত দোষ আর নাই। একটা অপরটার corollary ; এই সতীত্ব যে নারীর কতবড় ধৰ্ম্ম হওয়া উচিত, রামায়ণ, মহাভারত ও পুরাণাদিতে সে-কথার পুনঃপুনঃ আলোচনা হইয়া গিয়াছে। এ-দেশে এ তর্ক এত অধিক হইয়াছে যে, এ-সম্বন্ধে আর বলিবার কিছু নাই। এখানে স্বয়ং ভগবান পৰ্য্যন্ত সতীত্বের দাপটে কতবার অস্থির হইয়া গিয়াছেন । কিন্তু সমস্ত তর্কই একতরফা—এক নারীরই জন্ত । পুরুষের এ-সম্বন্ধে যে বিশেষ কোন বাধ্য-বাধকতা ছিল, তাহ কোথাও খুজিয়া মেলে না, এবং এতবড় একটা প্রাচীন দেশে পুরুষের সম্বন্ধে একটা শব্দ পর্য্যন্ত যে নাই এ-কথা খুলিয়া বলিলে হাতহাতি বাধিবে, না হইলে বলিতাম। ইংরাজ বলে, chastity, তবুও ইহার দ্বারা তাহারা নরনারী উভয়কেই নির্দেশ করে, কিন্তু এ-দেশে ও-কথাটার বাঙলা করিলে “সতীত্ব’ দাড়ায় ; সেট নিছক নারীরই জন্ত । শাস্ত্রকারের বনে জঙ্গলে বাস করিতেন বটে, কিন্তু তাহারা সমাজ চিনিতেন। তাই একটা শব্দ তৈরি করিয়াও র্তার জাত-ভাইকে অর্থাৎ পুরুষকে inconvenient করিয়া যান নাই। তাহার প্রবৃত্তি নারী-সম্বন্ধে যত-রকমে হাত-পা ছড়াইয়া খেলিতে পারে, তাহার জায়গা রাখিয়া গিয়াছেন। পৈশাচ বিবাহটাও বিবাহ। এমনি সহানুভূতি। এতই দয়া । আর এত দয়া না থাকিলে কি পুরুষ শাস্ত্রকারকে মানিত, না, আজ বিংশ শতাব্দীতেও বিধবা-বিবাহ উচিত কি না, জিজ্ঞাসা করিতে র্তাহার কাছে ছুটিয়া যাইত। কবে কোন যুগে সে-সব পুথিপত্র দরিয়ায় ভাসাইয়া দিয়া মনের মত শাস্ত্র বানাইয়া লইয়া ছাড়িত। যাহাই হোক, নারীর জন্ত সতীত্ব, পুরুষের জন্ত নয়। এ সতীত্বের চরম দাড়াইয়াছিল—সহমরণে। কবে এবং কি হইতে ইহার স্বত্রপাত, সে-কথা ইতিহাস লেখে না। রামায়ণে স্বামীর মৃত্যুতে কৌশল্য বোধ করি একবার রাগ করিয়া সহমরণে যাইবেন বলিয়া ভয় \O86.