পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/৩৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ এই তার হালি, এই তার সহমৃতা হইতে যাওয়া । তার পর চিতায় বসাইয়া কাচা বঁশের মাচ বুনিয়া চাপিয়া ধরা হইত, পাছে সতী দাহ-যন্ত্রণ আর সহ করিতে না পারে। এত খুন ও ধী ছড়াইয়া অন্ধকার ধুয়া করা হইত যে, কেহ তাহার যন্ত্রণা দেখিয়া যেন ভয় না পায় । এবং এত রাজ্যের ঢাক-ঢোল কঁাশি ও শাখ সজোরে বাজানো হইত যে, কেহ যেন তাহার চীৎকার, কান্না বা অমুনয়-বিনয় না শোনে । এই ত সহমরণ ! আমি জানি, এখানে অনেক-রকমের আপত্তি উঠিবে। প্রথমেই উঠিবে, দেশের লোকের সত্যই যদি এই বিশ্বাস থাকে যে, সহমৃতা সতী পরলোকে স্বামীর সহিত বাস করিতে পায় এবং সেইজন্তই এ অনুষ্ঠান,—তাহা হইলেও আমার এই উত্তর যে, দেশের অশিক্ষিত ইতর লোক কি বিশ্বাস করিত, না করিত, সে আলোচনায় লাভ নাই, কারণ তাহার শুধু ভদ্র ও শিক্ষিতের অনুকরণ ও অনুগমন করিত মাত্র। কিন্তু যেদেশে তখনও টোল করিয়া মহামহোপাধ্যায়েরা সাংখ্য বেদান্ত পড়াইতেন, জন্মান্তর বিশ্বাস করিতেন, কৰ্ম্ম-ফলে জীবের স্থাবর-জঙ্গম পশু-জন্ম প্রচার করিতেন, দেবযান পিতৃযান প্রভৃতি পথের নির্দেশ করিতেন, তাহারা যে সত্যই বিশ্বাস করিতেন, পৃথিবীতে কৰ্ম্মফল যাহার যাহা হোক, দুইটা প্রাণীকে একসঙ্গে বাধিয়া পোড়াইলেই পরলোকে একসঙ্গে বাস করে—এ-কথা স্বীকার করা আমার পক্ষে কঠিন । লেকি সাহেব লিখিয়াছেন, এই প্রথা ইংরাজের যখন তুলিয়া দেন, তখন টোলের পণ্ডিত-সমাজ চেচামেচি করিয়া সভা-সমিতি করিয়া, রাজা-রাজড়ার নিকট চাদ তুলিয়া বিলাত পৰ্য্যন্ত আপীল করিয়াছিল। তাঁহাতে বলা হইয়াছিল, এ-প্রথা নিষিদ্ধ হইয়া গেলে হিন্দু-ধৰ্ম্ম বনিয়াদ-সমেত বসিয়া হিন্দু একেবারে ধৰ্ম্মচু্যত হইয়া যাইবে । নারী-পূজা বটে ! তার পর আপীল যখন নিতান্তই নামঞ্জুর হইয় গেল, এবং বেশ বুঝা গেল, অতঃপর ঢাক ঢোল কঁশি শখের শব্দে পিয়াদার কান ঢাকা পড়িবে না, এবং ধুন পোড়াইয়া সমস্ত নদীর কিনারাটা অন্ধকার করিয়া ফেলিলেও দারোগার দৃষ্টি এড়াইবে না, তখন ধৰ্ম্মধ্বজেরও বুঝিতে বিলম্ব হইল না যে, সনাতন হিন্দুধৰ্ম্মের বনিয়াদ ইঞ্চি-কয়েক বসিয়া গেলেও যদি বা চলে, পুলিশের হাঙ্গামায় পড়িলে চলিবে মা ; সুতরাং অন্ত পথের সন্ধান দেখিতে হইল। রাজার কাজ রাজা করিয়া গেলেন, কিন্তু সমাজ-রক্ষকের কাজ বাড়িয়া গেল। এ দুর্দিনে বসিয়া পড়িলে চলিবে না । তাহারা কহিলেন, ম্লেচ্ছ আমাদের ধৰ্ম্ম বুঝিল না,—আইন করিয়া বসিল ; আমরা কিন্তু হাল ছাড়িব না। এইখানে বলিয়াই আমাদের বিধবাৰে দেবী wobo