পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/৩৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নারীর মুল্য বানাইয়া তুলিব। তাহার পর শাস্ত্রের পুরাতন শ্লোক এতদিন যাহা অব্যবহারে কোথায় পড়িয়াছিল, তাহাই টানিয়া বাহির করিয়া লোকাচারের দোহাই দিয়া, • সুনীতির দোহাই দিয়া, যত-রকমের কঠোরতা কল্পনা করা যাইতে পারে সমস্তই সন্ত-বিধবার মাথায় তুলিয়া দিয়া তাহাকে প্রত্যহ একটু একটু করিয়া দেবী করা হইতে লাগিল। সে নিরাভরণা, সে একবেলা খায়, সে হাড়ভাঙ্গ খাটুনি খাটে, খান-ফাড়া কাপড় পরে, কেন না সে দেবী । চীৎকার করিয়া পুরুষ প্রচার করিতে লাগিল, আমাদের বিধবার মত কাহার সমাজে এমন দেবী আছে! অথচ দেবীটকে বিবাহের ছানল-তলায় ঢুকিতে দেওয়া হয় না—পাছে দেবীর মুখ দেখিলেও আর কেহ দেবী হইয়া পড়ে। মঙ্গল-উৎসবে দেবীর ডাক পড়ে না, দেবীর ডাক পড়ে শ্রাদ্ধের পিগু রাধিতে । তার মা তাহাকে দেখিয়া হয়ত বা সহ্য করিতে পারিলেন না, অমুখে পড়িয়া মারা গেলেন। বাপ পঞ্চাশ বৎসর বয়সে ‘দায়ে পড়িয়া’, ‘নিতান্ত অনিচ্ছায়’ ‘লোকের অনুরোধ এড়াইতে না পারিয়া’ তার চেয়ে ছোট একটি মেয়েকে বিবাহ করিয়া ঘরে আনিলেন। ঘরের বিধবা মেয়ের উপর হুকুম হইয়া গেল, একটু সকাল সকাল, অর্থাং বেলা দশটার মধ্যে রাধিয়া বাড়িয়া তাহার বৌমাকে যেন খাওয়াইয়া দেওয়া হয়। না হইলে ছোট মেয়ে, হয়ত পিত্ত পড়িবে। এ-বাড়িতে বিধবা-মেয়ে ও নববধূর মূল্য যে এক বাটখারায় ধাৰ্য্য হইতে পারে না, সে-কথা বোধ করি আর বুঝাইয়া বলিতে হইবে না। বাপ ত বিবাহ করিয়া আনিলেন,—ইনি প্রাচীন, সম্ভ্রান্ত, টোলের অধ্যাপক, শাজজ্ঞানেরও নাকি সীমা নাই, বিধবা-বিবাহের বিরুদ্ধে একখানা বইও লিখিয়াছেন,–কিন্তু সে যাই হৌক, যে লোক এক বাটীর মধ্যে বাস করিয়া ও তাহার নিজের মেয়ের চেয়ে ছোট একটি মেয়েকে পত্নীভাবে গ্রহণ করিতে পারে, সে যে কেমন করিয়া মুখে আনে, ঘরের কোণে নারীজাতিকে পূজা করি, এ আমার বুদ্ধির অগোচর ! অথচ যে পুরুষ এ-রকমটি করে নাই, সে তৎক্ষণাৎ বলিয়া উঠিবে, যে করে সে করে, আমরা ত পারি না। অর্থাৎ সে ভাবিতে চায় না, এ অবস্থায় সে নিজে কি করিবে। অবশু, ও দুর্ঘটনা ঘটিবার পূৰ্ব্বে কাহাকেও স্বীকার করিতে বাধ্য করা যায় না, কিন্তু শতকরা নিরনধ্বই জন পুরুষ যে ঠিক এমনটাই করে, তাহ নিঃসন্দেহ। এক স্ত্রী জীবিত থাকিতেও পুরুষ ঘরের মধ্যে আরও একশত স্ত্রী আনিয়া উপস্থিত করিতে পারে, কিন্তু দ্বাদশবর্ষীয়া বালিকা বিধবা হইলেও তাহাকে দেবী হইতেই হইবে, এই ব্যবস্থা এদেশের সমস্ত নারীজাতিকে যে কত হীন, কত আগৌরবের স্থানে টানিয়া আনিয়াছে, সে-কথা লিখিয়া শেষ করা যায় না। W)8&