পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/৩৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎসাহিত্য সংগ্ৰহ থাক এ-কথা। আমাদের সহমরণের কথা হইতেছিল। এবং সেই স্বত্রে পুরুষের নারী-পূজার উদ্যমের প্রসঙ্গ উঠিয়া পড়িয়াছিল। কিন্তু এই ব্যাপারে যদি কেহ প্রতিবাদ করিয়া বলেন, এদেশে সমস্ত সতীকেই কি জোর করিয়া সহমরণে বাধ্য করা হইত ? স্বেচ্ছায় আত্মবিসর্জন কি ছিল না ? রাজপুতের জহরব্রতের কথা কি জগৎ শুনে নাই ? এই ত সেদিনও বাঙালীর ঘরে স্বামীর মৃত্যুসংবাদ শুনিবামাত্রই স্ত্রী সৰ্ব্বাঙ্গে কেরোসিন ঢালিয়া পুড়িয়া মরিয়াছে। এমন পতিভক্তি, এমন গৌরবের কথা আর কোন দেশে শোনা যায় ? শোনা যদি নাও যাইত, তাহাতেও পুরুষের যশ কিছুমাত্র বৃদ্ধি করিত না, কিংবা নারীর প্রতি পুরুষের শ্রদ্ধা-ভক্তিও সপ্রমাণ করিত না । তদ্ভিয়, বলপূর্বক হৌক, কৌশল করিয়াই হোক, কিংবা মাতাল করিয়াই হোক, একটিমাত্র নারীকেও দগ্ধ করা কি একটা দেশের পক্ষে যথেষ্ট নয় ? সেদিন ঐ কেরোসিনে আত্মহত্যা করায় দেশের অনেকেই বাহবা দিয়া বলিয়াছিল, ই সতী বটে। অর্থাৎ, আরো দুই-চারিট এমন ঘটিলে তাহার খুশী হয়। এ ঘটনায় এ-দেশের পুরুষের মনের গতি যে কোনদিকে, শুধু যে ইহাই বুঝিতে পারা গিয়াছিল তাহ নয়, এমন দেশে একসঙ্গে বাস করিয়া নারীর মনের গতিও যে স্বভাবতঃ কোনদিকে ঝুকিয়া পড়িবে, তাহাও বুঝিতে পারা গিয়াছিল। যে যাহার আশ্রিত, সে তাহাকে সুখী করিতেই চায়। আমি যদি বাটীর মধ্যে সকলকেই একবাক্যে ঐ প্রশংসা করিতে শুনি, আমারে ঐ অবস্থায় মুখ্যাতি ও বাহবা-লাভের লোভ যে প্রবল হইয়া উঠিবে, তাহা অস্বাভাবিক নহে। ইহার উপর ধৰ্ম্মের গন্ধ আছে । সে-বেচারার হাতে নাকি গীতা ছিল। গীতায় কি ওই কথা বলে ? কিন্তু সে ভাবিল, গীতা হাতে থাকিলে আরো ভাল। এখানে অশোভন উদাহরণ দিবার ইচ্ছ। আমার না হইলে এই গৌরবান্বিত কেরোসিন আত্মহত্যায় এমন মেয়ের কথাও বলা যাইতে পারিত, যে সতীও নয়, এবং ঠিক স্বামীর শোকেও এ-কাজ করে নাই। তা ছাড়া, শাশুড়ীর গঞ্জনায়, সময়ে বিবাহ ন হইবার লাঞ্ছনায়,—ইত্যাদি আরও অনেক সংবাদ খবরের কাগজ লিখে,—কিন্তু সে-সব থাকৃ। আমাদের সতীসাধবীর কথাই চলুক । • স্বামীর মৃত্যুতে কাহারও কাহারও আত্মহত্যা করিবার কি যে একটা প্রবল বেশক হয়, তাহা যাহার চোখে দেখিয়াছে তাহারাই জানে। আমি একজনকে তেতালার ছাদ হইতে পড়িয়া মরিতে দেখিয়াছি, আর একজনকে গলায় দড়ি দিতে দেখিয়াছি-বিষ খাইয়া মরিতে অনেক শুনিয়াছি। কিন্তু তাই বলিয়া এ মর, WO? o