পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/৩৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ কারণ, পুরুষ এই বলিয়া একটা বড়-রকমের উত্তর করিতে পারে যে, অবস্থা-ভেদে সে ষে-মূল্য রমণীকে দিয়া আসিয়াছে তাহ ঠিকই হইয়াছে। যেমন, এদেশের কোন এক পণ্ডিত র্তাহার বইয়ে লিথিয়াছেন যে, মসুর সময়ে ব্যভিচার-স্রোত অত্যন্ত প্রবল ছিল বলিয়াই অমন হাড়-ভাঙ্গা আইন-কানুন নারীর উপর জারি করা হইয়াছিল। বোধ করি ইহার ধারণা যে, ব্যভিচারের জন্য শুধু নারীই দায়ী—পুরুষের তাহাতে নামগন্ধও ছিল না । সে যাই হোক, এই উত্তরটারও কোন বনিয়াদ আছে কি না, তাহার মীমাংসা করা আবশ্বক। ইতিপূৰ্ব্বে এই প্রবন্ধের একস্থানে বলিয়াছি, সংসারে নারী যদি বিরল হইতেন, তবেই নারীর যথার্থ মূল্য স্থির করা সহজ হইত ; কিন্তু, ‘যদি’র কথা ছাড়িয়া দিয়া ইহার বর্তমান অবস্থার ঠিক দামটি পুরুষ দিয়াছে কি না, তাহাই দেখিবার চেষ্টা করিতেছি । আডাম স্মিথ যখন প্রথম প্রচার করেন, জগতের সমস্ত বস্তুই যেমন নৈসর্গিক নিয়মের অধীন, তাহদের মূল্যও সেই নিয়মেরই অধীন। তখন সকল লোকে বুঝিতে পারে নাই। তাহারা মনে করিয়াছিল, তাহদের জিনিস তাহারা যদৃচ্ছ বেচিবে কিনিবে—সে-মূল্য ধাৰ্য্য করিয়া দিবার মালিক তাহারা ছাড়া আর কেহ নাই। এই অহঙ্কারে মানুষ প্রায় শতাব্দীকাল পর্য্যন্ত এই সত্যকে অস্বীকার করিয়াই চলিয়াছিল। এখনই যে সকলে একবাক্যে মানিয়া লইয়াছে তাহ বলি না, কিন্তু যাহারা মানিয়াছে তাহারা এটা বেশ দেখিতে পাইয়াছে, এই স্বাভাবিক নিয়ম লঙ্ঘন করিয়া চলিলে শেষ পৰ্য্যন্ত কিছুতেই সুফল ফলে না। তাহদেরও না, আর পাচজনেরও না ; ধানচালের বাজারেও না, ছেলে-মেয়ে বেচাবেচির বাজারেও না । এই অন্ধতার একটা জলন্ত দৃষ্টান্ত, গায়ের জোরে দাম বাড়ানোর একটা জীবন্ত সাক্ষী আমাদের দেশের কৌলীন্য বংশগত করাটা । তা যদি না হইত, তাহা হইলে আজ কুলীন বামুন বলিলে লোকে গালাগালি মনে করিত না । বামুনের ছেলে শ্বশুরবাড়ি গিয়া পয়সা লইয়া রাত্রি যাপন করে, এবং পরদিন সেই পয়সায় গাজী-গুলি খায়, এটা হইতে পারিত না । মানুষ, বিশেষ করিয়া ব্ৰাহ্মণ-সন্তান, কতটা হীন হইবার পরে তবে যে এই কাজ করিতে সমর্থ হয় তাহা বুঝাইয়া বলিতে যাওয়াই বাড়াবাড়ি। এই কুলীনের ছেলে কুলীনকে ভ্রান্ত সমাজ যে মূল্য দিতেছিল, সে তাহার যথার্থ প্রাপ্য মূল্য হইলে কিছুতেই তাহারও এতবড় অবনতি ঘটিত না; সমাজও এমন শতাব্দীর পর শতাৰী ধরিয়া অগণিত নিরুপায় বঙ্গ-রমণীর নিষ্পাপ রক্ত সৰ্ব্বাঙ্গে মাখিয়া, তাহীদের ব্যর্থ-জীবনের দীর্ঘশ্বাস ও অভিসম্পাত বহিয়া, ভগবানের কৃপা হইতে বঞ্চিত হইয়া এমন পঙ্গু এমন মিথ্যা হইয় পড়িতে পারিত না। আজ বোধ করি কতকটা চক্ষু খুলিয়াছে। যাহার সত্য মুল্য Woo'8