পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষ প্রশ্ন একটা হুলুস্থল পড়ে গেল, সমস্ত উদ্যোগ-আয়োজন লণ্ডভণ্ড হবার উপক্রম হ’ল, কিন্তু খুড়োকে আমি চিনতাম, বুঝলাম এর আর নড়-চড় নেই। অজিত নিজেও মন্ত বড়লোকের ছেলে, তারও এক বিধবা খুড়ি ছাড়া সংসারে কেউ ছিল না, তিনি ভয়ানক রাগ কুরলেন ; অজিত দুঃখে অভিমানে ইন্‌জিনিয়ারিং পড়ার নাম করে বিলেত চলে গেল, সবাই জানলে এ বিবাহ চিরকালের মতই ভেঙে গেল । অবিনাশ নিরুদ্ধ নিশ্বাস মোচন করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, তার পরে ? আগুবাবু বললেন, সবাই হতাশ হলাম, হ’ল না শুধু মণি নিজে। আমাকে এসে বললে, বাবা, এমন কি ভয়ানক কাণ্ড ঘটেচে যার জন্ত তুমি আহার-নিদ্রা ত্যাগ করলে ? তিন বছর এমনিই কি বেশি সময় ? তার যে কি ব্যথা লেগেছিল সে ত জানি। বললাম, মা তোর কথাই যেন সার্থক হয়, কিন্তু এ-সব ব্যাপারে তিন বছর কেন, তিনটে দিনের বাধাও যে মারাত্মক । মণি হেসে বললে, তোমার ভয় নেই বাবা, আমি তাকে চিনি। অজিত চিরদিনই একটু সাত্বিক প্রকৃতির মানুষ, ভগবানে তার অচল বিশ্বাস, যাবার সময়ে মণিকে ছোট একখানি চিঠি লিখে চলে গেল। এই চার বৎসরের মধ্যে আর কোনদিন সে দ্বিতীয় পত্র লেখেনি। না লিখুক, কিন্তু মনে মনে মণি সমস্তই জানতো এবং তখন থেকে সেই যে ব্রহ্মচারিণী জীবন গ্রহণ করলে একটা দিনের জন্যও তা থেকে ভ্ৰষ্ট হয়নি। অথচ বাইরে থেকে কিছুই বোঝবার যে নেই অবিনাশবাবু। অবিনাশ শ্রদ্ধায় বিগলিত-চিত্তে কহিলেন, বাস্তবিকই বোঝবার যে নেই। কিন্তু আমি আশীৰ্ব্বাদ করি, ওরা জীবনে যেন সুখী হয়। আশুবাবু কস্তার হইয়াই যেন মাথা অবনত করিলেন, কহিলেন, ব্রাহ্মণের আশীৰ্ব্বাদ নিফল হবে না। অজিত সৰ্ব্বাগ্রেই খুড়োমশায়ের কাছে গিয়েছিল। তিনি অমুমতি দিয়েচেন । না হলে এখানে বোধ করি সে আসতে না । অতঃপর উভয়েই ক্ষণকাল নিঃশব্দে থাকিয়া আগুবাবু বলিতে লাগিলেন, অজিত বিলেত চলে গেল, বছর-দুই পৰ্য্যন্ত তার কোন সংবাদ না পেয়ে আমি ভিতরে ভিতরে পাত্রের সন্ধান যে করিনি তা নয়। কিন্তু মণি জানতে পেরে আমাকে নিষেধ করে দিয়ে বললে, বাবা, এ চেষ্টা তুমি ক’রো না। আমাকে তুমি প্রকাশ্বেই সম্প্রদান কয়নি, কিন্তু মনে মনে ত করেছিলে। আমি বললাম, এমন কত ক্ষেত্রেই ত হয় মা । কিন্তু মেয়ের দু’চক্ষে যেন জল ভরে এলো। বললে, হয় না বাবা। শুধু কথা-বাৰ্ত্তাই হয়, কিন্তু তার বেশি–না বাবা, আমার অদৃষ্টে ভগবান যা লিখেচেন তাই যেন מס\