পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/৪২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ মুসাফির-রচিত এই “সাহিত্যের মামলা’র অধিকাংশ মস্তব্যের সহিতই আমি একমত, শুধু তাহার একটি কথায় যৎকিঞ্চিৎ মতভেদ আছে। রবীন্দ্রনাথের ব্যাপার রবীন্দ্রনাথ জানেন, কিন্তু আমার নিজের কথা যতটা জানি তাহাতে শরৎচন্দ্র “কল্লোল’, ‘কালি-কলম’ বা বাঙলার কোন কাগজই পড়েন না বা পড়িবার সময় পান না, মুসাফিরের এ অনুমানটি নিভুল নয়। তবে এ-কথা মানি যে, সব কথা পড়িয়াও বুঝি না, কিন্তু না-পড়িয়াও সব বুঝি, এ দাবী আমি করি না। এ ত গেল আমার নিজের কথা । কিন্তু যা লইয়া বিবাদ বাধিয়াছে সে জিনিসটি যে কি, এবং যুদ্ধ করিয়া যে কিরূপে তাহার মীমাংসা হইবে সে আমার বুদ্ধির অতীত। রবীন্দ্রনাথ দিলেন সাহিত্যের ধৰ্ম্ম নিরূপণ করিয়া, এবং নরেশ দিলেন সেই ধৰ্ম্মের সীমানা নির্দেশ করিয়া। যেমন পাণ্ডিত্য তেমনিই যুক্তি, পড়িয়া মুগ্ধ হইয়া গেলাম। ভাবিলাম, ব্যস, ইহার পরে আর কথা চলিবে না। কিন্তু অনেক কথাই চলিল। তখন কে জানিত কাহার সীমানায় কে পা বাড়াইয়াছে, এবং সেই সীমানার চৌহদ্দি লইয়া এত লাঠি-ঠ্যাঙ্গ উদ্যত হইয়া উঠিবে ! আশ্বিনের ‘বিচিত্রা’য় শ্ৰীযুক্ত দ্বিজেন্দ্রনারায়ণ বাগচী মহাশয় ‘সীমানা বিচারে’র রায় প্রকাশ করিয়াছেন। ঠাসবুনানি বিশ পৃষ্ঠা-ব্যাপী ব্যাপার। কত কথা, কত ভাব । যেমন গভীরতা, তেমনি বিস্তৃতি, তেমনি পাণ্ডিত্য। বেদ, বেদান্ত, দ্যায়, গীতা, বিদ্যাপতি, চণ্ডীদাস, কালিদাসের ছড়া, উজ্জলনীলমণি, মায় ব্যাকরণের অধিকরণ কারক পর্য্যন্ত । বাপরে বাপ । মামুযে এত পড়েই বা কখন, এবং মনে রাখেই বা কি করিয়া ! ইহার পার্শ্বে ‘লাল শালু-মণ্ডিত বংশখণ্ড-নির্মিত ক্রীড়া-গাওঁীব-ধারী নরেশচন্দ্র একেবারে চ্যাপটাইয়া গিয়াছেন। আজ ছেলেবেলার একটা ঘটনা মনে পড়িতেছে। আমাদের অবৈতনিক নব-নাট্যসমাজের বড় অ্যাক্টর ছিলেন নরসিংহবাবু। রাম বল, রাবণ বল, হরিশ্চন্দ্র বল, র্তাহারই ছিল একচেটে । হঠাৎ আর একজন আসিয়া উপস্থিত হইলেন, তার নাম রাম-নরসিংবাবু। আরও বড় অ্যাক্টর । যেমন দরাজ গলার হুঙ্কার, তেমনি হস্ত-পদ সঞ্চালনের অপ্রতিহত পরাক্রম। যেন মত্ত হস্তী। এই নবাগত রাম-নরসিংবাবুর দাপটে আমাদের শুধু নরসিংবাবু একেবারে তৃতীয়ার শশিকলার স্থায় পাণ্ডুর হইয়া গেলেন। নরেশবাবুকে দেখি নাই, কিন্তু কল্পনায় র্তাহার মুখের চেহারা দেখিয়া বোধ হইতেছে, যেন তিনি যুক্ত-হস্তে চতুরাননকে গিয়া বলিতেছেন, প্ৰভু ! ইহার চেয়ে যে আমার বনে বাস করা ভাল। দ্বিজেন্দ্রবাবুর তর্ক করিবার রীতিও যেমন জোরালো, দৃষ্টিও তেমনি ক্ষুরধার। রায়ের মুসাবিদায় কোথাও একটি অক্ষরও যেন ফাক না পড়ে এমনি সতর্কত। যেন 8S e