পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/৪২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ রাজা বললেন, “কি শান্ত—কি লক্ষণ—কি শ্ৰী–এ যে শুধু আমার ঘরেরই উপযুক্ত ।” সেদিন থেকে চারিদিকে কানাযুষে পড়ে গেল। আমার মনের মধ্যে ছটুফটানি ধরল। কৈ, রাজার খবর আসে না কেন ? হায় পোড়াকপালী !—শেযে তোর সাধ মিটল ! যখন ডাক পড়ল, তখন একেবারে চুলের মুঠি ধরে। আর সবুর সইল না। জানিনে, কবে কোন ফাকে কুমার আমাকে দেখে নাওয়া-খাওয়া বন্ধ করে বসলেন । o পাজি-পুথি ধরে গোণকার বিয়ের দিন ঠিক করলেন,—শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমেতে। কি জল, কি ঝড় সে-রাতে। সত্যি বলছি—সে বাতাসে বিয়ের মন্তরগুলো সব উড়ে গেল। শুধু আমরা দু’জনে দু’জনকে দেখলাম—মাত্র একটিবার । তার পর ঝড়ে সব বাতি নিবে গেল—আমাদের গলার যুইএর গোড়ে ছিড়ে-খুড়ে থও খণ্ড হয়ে কোথায় উড়ে চলে গেল । আমি কুমারের বুকের কাছে জড়সড় হয়ে বললুম, “ওগো, আমার যে বড় ভয় করছে।” তিনি মুখের কাছে মুখ এনে বললেন, “আরো সরে এস—আমার এই বুকের মধ্যে ।” 词 আমি কাপতে কঁপিতে ঝড়ের মধ্যে—পার্থীর ছানা যেমন তার নীড়ের মধ্যে ঘুমোয়,—তেমনি করে ঘুমিয়ে পড়লাম। Įs সকালে ঘুম-ভেঙে দেখি, কই রাজকুমার,–এ যে আমাদের বুড়ে বির বুকের মধ্যে রয়েছি ! তার মুখের দিকে চেয়ে দেখলাম, দু'চোখ বেয়ে তার জল পড়ছে। কথা কইতে সাহস হল না। দেখলাম, বাইরে মেঘ থেকে অজস্র জল পড়ছে—দেখলাম, বাড়ির সকলের চোখ থেকে জল গড়াচ্ছে । গাছের মধ্যে দিয়ে সো-সো করে বাতাস বইছে। আমার বুকের মধ্যে মনে হ’ল অনেকখানি বাতাস তেমনি করে গুমরে উঠছে। মনে হ’ল কাদি। কান্না এল না। অবাক হয়ে রইলাম। একরাতের মধ্যে আমার বুকের সব রক্ত–চোখের সব জল এমন নিঃশেষ করে কে শুষে নিলে। তার পর আর কুমারের সঙ্গে দেখা হ’ল না। লজ্জায় কারুকে জিজ্ঞাসা করতে পারলাম না, তিনি কোথায় । মস্তবড় বাড়ির মধ্যে খাঁচার পাখীর মত অটুকা পড়ে রইলুম। যে আমাকে দেখে সেই কাদে—আমি অবাক হয়ে চেয়ে থাকি। 838