পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষ প্রশ্ন ছেলেটি হাসিয়া কহিল, তা হোক। এই আমাদের পেশা । কাপড়ে কালি লাগায় আমাদের আগৌরব হয় না । কথা শুনিয়া আশুবাবু মনে মনে অত্যন্ত প্রীত হইলেন এবং অবিনাশও যুবকের বিনম্র সরলতায় মুগ্ধ হইলেন। মণি আসিয়া উপস্থিত হইল। সহসা তাহার প্রতি চাহিয়া অবিনাশ যেন চমকিয়া গেলেন। কিছুদিন তাহাকে দেখেন নাই, ইতিমধ্যে এই অপ্রত্যাশিত আনন্দের কারণ ঘটিয়াছে। “ বিশেষতঃ তাহার পিতার নিকট হইতে এইমাত্র যে-সকল কথা শুনিতেছিলেন, তাহাতে মনে করিয়াছিলেন মনোরমার মুথের উপর আজ হয়ত এমন কিছু একটা দেখিতে পাইবেন যাহা অনিৰ্ব্বচনীয়, যাহা জীবনে কখনও দেখেন নাই । কিন্তু কিছুই ত নয় ! নিতান্তই সাধা-সিধা পোষাক। গোপন আনন্দের প্রচ্ছন্ন আড়ম্বর কোথাও আত্মপ্রকাশ করে নাই, সুগভীর প্রসন্নতার শান্ত দীপ্তি মুখের কোনখানে বিকশিত হইয়া উঠে নাই, বরঞ্চ কেমন যেন একটা ক্লান্তির ছায়া চোখের দৃষ্টিকে স্নান করিয়াছে। অবিনাশের মনে হইল, পিতৃ-স্নেহবশে হয় তিনি নিজের কন্যাকে ভুল বুঝিয়াছেন, না হয় একদিন যাহা সত্য ছিল, আজ তাহা মিথ্যা হুইয়া গেছে। অনতিকাল পরে প্রকাও মোটর-যানে সকলেই বাহির হইয়া পড়িলেন। নদীর ঘাটে ঘাটে তখন পুণ্য-লুব্ধ নারী ও রূপ-লুব্ধ পুরুষের ভিড় বিরল হইয়া আসিয়াছে, সুন্দর ও সুদীর্ঘ পথের সর্বত্রই তাঁহাদের সাজ-সজ্জা ও বিচিত্র পরিধেয় অস্তমান রবিকরে অপরূপ হইয়া উঠিয়াছে, তাহাই দেখিতে দেখিতে তাহারা বিশ্ব-খ্যাত, অনন্ত সৌন্তৰ্য্যময় তাজের সিংহদ্বারের সম্মুখে আলিয়া যখন উপস্থিত হইলেন, তখন হেমন্তের নাতিদীর্ঘ দিবাভাগ অবসানের দিকে আসিতেছে । যমুনা-কুলে যাহা-কিছু দেখিবার দেখা সমাপ্ত করিয়া অক্ষয়ের দলবল ইতিপূর্বেই আসিয়া হাজির হইয়াছেন। তাজ তাহারা অনেকবার দেখিয়াছেন, দেখিয়া দেখিয়া অরুচি ধরিয়া গিয়াছে, তাই উপরে না উঠিয়া নীচে বাগানের একাংশে আসন গ্রহণ করিয়া উপবিষ্ট ছিলেন, ইহাদিগকে আসিতে দেখিয়া উচ্চ কোলাহলে সংবৰ্দ্ধনা করিলেন। বাত-ব্যাধি-পীড়িত আগুবাবু অতিগুরুভার দেহখানি ঘাসের উপর বিন্যস্ত করিয়া দীর্ঘশ্বাস মোচন করিয়া কহিলেন, আঃ—বাচা গেল। এখন যার যত ইচ্ছে মমতাজ বেগমের কবর দেখে আনন্দলাভ কর গে-বাবা, আশু বপ্তি এইখান থেকেই বেগমসাহেবাকে কুর্নিশ জানাচ্চেন। এর অধিক আর তাকে দিয়ে হবে না। মনোরমা ক্ষুন্নকণ্ঠে কহিল, সে হবে না বাবা । তোমাকে একলা ফেলে রেখে আমরা কেউ যেতে পারব না । "N)