পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষ প্রশ্ন দুঃখ কাল করে। ঘড়ির পানে তাকিয়ে স্থাখে দুটো বাজে। দুটি খেয়ে এখন শোও গে । কাল শুনবো সব কথা । যত্ন ! যদু ! সে ব্যাটাও কি গেল নাকি তোমাকে খুজতে ? অজিত বলিল, দেখুন ত আপনাদের অন্যায়। এত বড় সহরে কোথায় সে আমাকে পথে পথে খুজবে ? আপ্তবাবু বলিলেন, তুমি ত বললে অন্যায়। কিন্তু আমাদের যা হচ্ছিল তা আমরাই জানি । এগারোটার সময় শিবনাথের গান-বাজনা বন্ধ হয়েচে, তখন থেকে—মণিই বা গেলো কোথায় ? তাকে ত তখন থেকে দেখচিনে । অজিত কহিল, বোধ হয় শুয়েচেন । শোবে কি হে ? এখনো যে তার খাওয়া হয়নি। বলিযাই তাহার হঠাৎ একটা কথা মনে হইতেই জিজ্ঞাসা করিয়া উঠিলেন, আস্তাবলে কোচম্যানকে দেখলে ? অজিত কহিল, কই না ? வி তবেই হয়েচে । বলিয়া আগুবাবু দুশ্চিন্তায় আর একবার সোজা হইয়া বসিয়া কহিলেন, যা ভেবেচি তাই। গাড়ীটা নিয়ে সেও দেখচি খুজতে বেরিয়েচে। দ্যাথে দিকি অন্যায়। পাছে বারণ করি, এই ভয়ে একটা কথাও বলেনি। চুপি চুপি চলে গেছে। কখন ফিরবে কে জানে। আজ রাতটা তা হলে জেগেই কাটলো । আমি দেখচি গাড়ীটা আছে কি না । বলিয়া অজিত ঘর হইতে বাহির হইয় গেল । আস্তাবলে গিয়া দেখিল গাড়ী মজুত এবং ঘোড় মাঝে মাঝে পা ঠুকিয়া হৃষ্টচিত্তে ঘাস খাইতেছে । তাহার একটা দুশ্চিন্তা কাটিল। নীচের বারান্দার উত্তর প্রান্তে কয়েকটা বিলাতী ঝাউ ও পাম গাছ বহু অযত্ন মাথায় করিয়াও কোনমতে টিকিয়াছিল, তাহারই উপরে মনোরমার শয়নকক্ষ। তখনও আলো জলিতেছে কি না জানিবার জন্য অজিত সেইদিক দিয়া ঘুরিয়া আগুবাবুর কাছে যাইতেছিল, ঝোপের মধ্যে হইতে মামুষের গলা কানে গেল। অত্যন্ত পরিচিত কণ্ঠ। কথা কহিতেছিল কি একটা গানের স্বর লইয়া । দোষের কিছুই নয়—তাহার জন্ত ছায়াচ্ছন্ন বৃক্ষতলার প্রয়োজন ছিল না। ক্ষণকালের জন্ত অজিতের দুই পা অসাড় হইয়া রহিল। কিন্তু ক্ষণকালের জন্তই। আলোচনা চলিতেই লাগিল ; সে যেমন নি:শব্দে আসিয়াছিল, তেমনি নিঃশব্দে প্রস্থান করিল উভয়ের কেহ জানিতেও পারিল না—তাহাজের এই নিশীথ বিপ্রস্তালাপের কেহ সাক্ষী রহিল কি না । আশুবাবু ব্যগ্র হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, খবর পেলে ? অজিত কহিল, গাড়ী-ঘোড়া আস্তাবলেই আছে । মণি বাইরে যাননি । Vシ>