পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষ প্রশ্ন ধরে আমি কত রান্না রেখেচি। আপনি না এলে রাগ করে আমি সমস্ত মুচিলের ডেকে দিয়ে দিতাম । অজিত বলিল, আপনার রাগ ত কম নয় ! কিন্তু তাতে এর চেয়ে থাবারগুলোর ঢের বেশি সদগতি হ’তো । এ-কথার মানে ? বলিয়া কমল ক্ষণকাল অজিতের মুখের প্রতি চাহিয়া থাকিয়া শেষে নিজেই কহিল, অর্থাৎ আপনার অভাব নেই, হয়ত অধিকাংশই ফেলা যাবে, কিন্তু তাদের অত্যন্ত অভাব । তারা খেয়ে বঁাচবে। সুতরাং তাদের খাওয়ানোই খাবারের যথার্থ সদ্ব্যবহার, এই না ? অজিত ঘাড় নাড়িয়া বলিল, এ-ছাড়া আর কি ! কমল বলিল, এ হ’লো সাধু লোকদের ভাল-মন্দর বিচার, পুণ্যাত্মাদের ধৰ্ম্ম-বুদ্ধির যুক্তি। পরলোকের খাতায় তারা একেই সার্থক ব্যয় বলে লিখিয়ে রাখতে চায়, বোঝে না যে আসলে ঐটেই হ’লে ভুয়ো । আনন্দের স্নধাপাত্র যে অপব্যয়ের অন্যায়েই পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে এ-কথা তারা জানবে কোথা থেকে ? অজিত আশ্চৰ্য্য হইয়া কহিল, মানুষের কৰ্ত্তব্য-বুদ্ধির ভেতরে আনন্দ নেই নাকি ? কমল কহিল, না নেই। কৰ্ত্তব্যের মধ্যে যে আনন্দের ছলনা সে দুঃখেরই নামান্তর। তাকে বুদ্ধির শাসন দিয়ে জোর করে মানতে হয়। সেই ত বন্ধন। তা না হলে এই যে শিবনাথের আসনে এনে আপনাকে বসিয়েচি, ভালবাসার এই অপব্যয়ের মধ্যে আমি আনন্দ পেতাম কোথায় ? এই যে সারাদিন অভুক্ত থেকে কত কি বসে রেধেচি—আপনি এসে থাবেন বলে, এত বড় অকৰ্ত্তব্যের ভেতরে আমি তৃপ্তি পেতাম কোনখানে ? অজিতবাবু, আজ আমার সকল কথা আপনি বুঝবেন না, বোঝবার চেষ্টা করেও লাভ নেই, কিন্তু এতখানি উণ্টো কথার অর্থ যদি কখনো আপনা থেকে উপলব্ধি করেন, সেদিন কিন্তু আমাকে স্মরণ করবেন। কিন্তু এখন থাক, আপনি খেতে বসুন। বলিয়া সে পাত্র ভরিয়া বহুবিধ ভোজ্যবস্তু তাহার সম্মুখে রাখিল। অজিত বহুক্ষণ মৌন থাকিয়া কহিল, এ ঠিক যে আপনার শেষ কথাগুলোর অর্থ আমি ভেবে পেলাম না, কিন্তু তবুও মনে হচ্ছে যেন একেবারে অবোধ্য নয়। বুঝিয়ে দিলে হয়ত বুঝতেও পারি। 暫 কমল কহিল, কে বুঝিয়ে দেবে অজিতবাবু, আমি ? আমার দরকার ? বলিয়া । সে হাসিয়া বাকি পাত্রগুলা অগ্রসর করিয়া দিল । অজিত আহারে মনোনিবেশ করিয়া বলিল, আপনি বোধ হয় জানেন না যে, কাল আমার খাওয়া হয়নি । Woo