পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ কমল কছিল, আজ ভারি ইচ্ছে হ’ল আপনাকে একবার দেখে আসি, তাই চলে এলাম । আগুবাবু প্রত্যুত্তরে শুধু কহিলেন, বেশ করেচে। কিন্তু ইহার অধিক আর কিছু বলিতে পারিলেন না। অন্তান্ত সকলের মতে তিনিও জানেন এদেশে কমলের সঙ্গী-সাথী নাই, কেহ তাহাকে চাহে না, কাহারও বাটীতে তাহার যাইবার অধিকার নাই—নিতান্ত নিঃস্ব জীবনই এই মেয়েটিকে অতিবাহিত করিতে হয়, তথাপি এমন কথাও তাহার মুখ দিয়া বাহির হইল না—কমল, তোমার যখন খুশি স্বচ্ছদে আসিয়ে । আর যাহার কাছেই হোক, আমার কাছে তোমার কোন সঙ্কোচ নাই । ইহার; পরে বোধ করি কথার অভাবেই তিনি মিনিট দুই-তিন কেমন একপ্রকার অঙ্গমনস্কের মত মৌন হইয় রছিলেন। তাহার হাতের কাগজগুলা নীচে খসিয়া পড়িতে কমল হেঁট হইয়া তুলিয়া দিয়া কহিল, আপনি পড়ছিলেন, আমি অসময়ে এসে বোধ হয় বিশ্ন করলাম । আপ্তবাবু বলিলেন, না । পড়া আমার হয়ে গেছে। যেটুকু বাকি আছে তা না পড়লেও চলে—পড়বার ইচ্ছাও নেই। একটুখানি থামিয়া বলিলেন, তা ছাড়া তুমি চলে গেলে আমাকে একলা থাকতেই ত হবে, তার চেয়ে বসে দুটো গল্প করে আমি শুনি । কমল কহিল, আমি ত আপনার সঙ্গে সারাদিন গল্প করতে পেলে বেঁচে যাই । কিন্তু আর সকলে রাগ করবেন যে ? তাহার মুখের হাসি সত্বেও আশুবাবু ব্যথা পাইলেন ; কহিলেন, কথা তোমার মিথ্যে নয় কমল । কিন্তু র্যার রাগ করবেন তারা কেউ উপস্থিত নেই। এখানকার নতুন ম্যাজিষ্ট্রেট বাঙালী। তার স্ত্রী হচ্চেন মণির বন্ধু, একসঙ্গে কলেজে পড়েছিলেন। দিন-দুই হ’ল তিনি স্বামীর কাছে এসেচেন, মণি র্তার ওখানেই বেড়াতে গেছেন, ফিরতে বোধ হয় রাত্রি হবে । কমল সহাস্তে প্রশ্ন করিল, আপনি বললেন ধারা রাগ করবেন। একজম ত মমোরমা, কিন্তু বাকি কারা ? আগুবাবু বলিলেন, সবাই। এখানে তার অভাব নেই। আগে মনে হতে অজিতের হয়ত তোমার প্রতি রাগ নেই, কিন্তু এখন দেখি তার বিদ্বেষই যেন সবচেয়ে বেশি, যেন অক্ষয়বাবুকেও হারমানিয়েচে । কমল চুপ করিয়া শুনিতেছে দেখিয়া' বলিতে লাগিলেন, এসেও তাকে এমন দেখিনি, কিন্তু হঠাৎ দিন দু-তিনের মধ্যে সে যেন বদলে গেল। এখন অবিনাশকেও দেখি তাই । এরা সবাই মিলে যেন তোমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করেচে। ৭৬