পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্রই নিজের জীবনের যে আদর্শ যে ত্যাগ লোকের মনে আজ শ্রদ্ধা ও বিস্ময়ের কারণ হয়ে আছে, একদিন সে হয়ত শুধু অমুকম্পার ব্যাপার হবে। এই নিষ্ফল আত্ম-নিগ্রহের বাড়ী-বাড়িতে লোকে উপহাস করে চলে যাবে। এই আঘাতের নিৰ্ম্মমতায় পলকের জন্য আণ্ডবাবুর মুখ বেদনায় পাণ্ডুর হইয় গেল। বলিলেন, কমল, একে নিগ্রহ বলে নিচেচা কেন, এ যে আমার আনন্দ । এ যে আমার উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া বহুযুগের ধন। কমল বলিল, হোক বহুযুগ । কেবল বৎসর গণনা করেই আদর্শের মুল্য ধাৰ্য্য হয় না। আচল, অনড়, ভুলে-ভরা সমাজের সহস্ৰ বৰ্ষও হয়ত অনাগতের দশটা বছরের গতিবেগে ভেসে যায়। সেই দশটা বছরই ঢের বড় আগুবাবু। অজিত অকস্মাৎ জ্যা-মুক্ত ধমুর ন্যায় সোজা দাড়াইয়া উঠিল, কহিল, আপনার বাক্যের উগ্রতায় এদের হয়ত বিস্ময়ের অবধি নেই, কিন্তু আমি বিস্মিত হইনি। আমি জানি এই বিজাতীয় মনোভাবের উৎস কোথায় । কিসের জন্তে আমাদের সমস্ত মঙ্গল-আদর্শের প্রতি আপনার এমন নিবিড় ঘৃণা। কিন্তু চলুন, আর আমাদের মিথ্যে দেরি করবার সময় নেই, পাচটা বেজে গেছে। অজিতের পিছনে পিছনে সকলেই নিঃশব্দে বাহির হইয়া গেল। কেহ তাহাকে একটা অভিবাদন করিল না, কেহ তাহার প্রতি একবার ফিরিয়াও চাহিল না। যুক্তি যখন হার মানিল তখন এইভাবে পুরুষের দল নিজের জয় ঘোষণা করিয়া পৌরুষ বজায় রাখিল । তাহারা চলিয়া গেলে আগুবাবু ধীরে ধীরে বলিলেন, কমল, আমাকেই আজ তুমি সকলের চেয়ে বেশি আঘাত করেচ, কিন্তু আমিই তোমাকে আজ যেন সমস্ত প্রাণ দিয়ে ভালবেসেচি। আমার মণির চেয়ে যেন তুমি কোন অংশেই খাটো নয় মা । কমল বলিল, তার কারণ আপনি যে সত্যিকার বড়মানুষ কাকাবাবু। আগ্রনি ত এদের মত মিথ্যে নয়। কিন্তু আমারও সময় বয়ে যায়, আমি চললাম। বলিয়া সে র্তাহার পায়ের কাছে আসিয়া হেঁট হইয়া প্রণাম করিল। প্ৰণাম সে সচরাচর কাহাকেও করে না, এই অভাবনীয় আচরণে আণ্ডবাৰু ব্যতিব্যস্ত হইয়া উঠিলেন। আশীৰ্ব্বাদ করিয়া কহিলেন, আবার কবে আসবে মা ? অীর হয়ত আমি আসব না কাকাবাবু। বলিয়া সে ঘরের বাহির হইয়া গেল। আপ্তবাবু সেইদিকে চাহিয়া নিঃশব্দে বসিয়া'রছিলেন। կյ8