পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/১০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেনা-পাওন। মহে, কিন্তু ষোড়শীর সম্বন্ধে মোড়ল-পদবাচ্যদের মনোভাব যা-ই হোক, এই দীনদুঃখীরা তাহাকে যেমন ভক্তি করিত, তেমনি ভালবাসিত। এককড়ি নদীর উৎপাত হইতে বাচিবার সেই কেবল একমাত্র পথ ছিল । ছোট-গাটো ঋণ যখন আর কোথাও মিলিত না, তখন ভৈরবীর কাছে গিয়া হাত পাতিতে তাহদের বাধিত না । তাহার বাড়ি ছাড়িয়া আসার জন্য ইহাদের সত্য সত্যই বিশেষ কোন দুশ্চিন্তা ছিল না, তাহারা জানিত পিতা ও কন্যার মনোমালিন্য একদিন না একদিন মিটিবেই । ষোড়শীর দুর্নামের কথাটাও অপ্রকাশ ছিল না । কেবল সে-ই বলিয়া ইহা না রটিলেই ভাল হইত ; না হইলে দেবীর ভৈরবীদের স্বভাব-চরিত্র লইয়া মাথা গরম করার আবশ্বকতা কেহ লেশমাত্র অনুভব করিত না—দীর্ঘকালের অভ্যাসবশত: ইহা এতই তুচ্ছ হইয়া গিয়াছিল। কিন্তু ইহাকেই উপলক্ষ্য স্বষ্টি করিয়া মায়ের মন্দির লইয়া যে তুমুল কাণ্ড বাধিবে, কৰ্ত্তারা তারাদাস ঠাকুরকে সঙ্গে লইয়া সকাল নাই, সন্ধ্যা নাই হুজুরের কাছে আনাগোনা করিয়া কি-যেন কি-একটা ওলট-পালট ঘটাইবার মতলব করিবেন, এবং ওই যে অচেনা ছোট মেয়েটাকে কোথা হইতে কিসের জন্য অনিয়া রাখা হইয়াছে—এমনি সব সংশয়ের বিদ্যুৎ কথায় কথায় ক্ষণে ক্ষণে যখন চমকিতে লাগিল, তখন চোখের আড়ালে কোথাও আকাশের গায়ে যে অকালের মেঘ জমিয়া উঠিতেছে এবং তাহাতে দেশের ভাল হইবে না, এই ভাবটাই সকলের মধ্যে ক্রোধ ও ক্ষোভের মত আবৰ্ত্তিত হইতে লাগিল । সেদিন অষ্টমী তিথির জন্য মন্দির-প্রাঙ্গণে লোক-সমাগম কিছু অধিক হইয়াছিল । প্রতিমার অনতিদূরে বারান্দার একধারে বসিয়া ষোড়শী আরতির উপকরণ সজ্জিত করিতেছিল, তারাদাস ও সেই মেয়েটিকে সঙ্গে করিয়া এককড়ি আসিয়া উপস্থিত হইল । ষোড়শী কাজ করিতে লাগিল, মুখ তুলিয়া চাহিল না। এককড়ি কহিল, মা মঙ্গল, তোমার চণ্ডী-মাকে প্রণাম কর । পূজারী কি একটা করিতেছিল, সসন্ত্রমে উঠিয়া দাড়াইল । ষোড়শ চোখ না তুলিয়াও ইহা লক্ষ্য করিল। মেয়েট প্রণাম করিয়া উঠিয়া দাড়াহতেই পূজারী কহিল, মায়ের সন্ধ্যারতি কি তুমি দেখবে মা ? তা হলে দেবীর দক্ষিণে ওই যে আসন পাতা আছে ওর ওপরে গিয়ে ব’সো। এককড়ি ষোড়শীর প্রতি একটা বাকী কটাক্ষ নিক্ষেপ করিয়া সহাস্তে কহিল, ওঁর নিজের স্থান উনি নিজেই চিনে নেবেন ঠাকুর, তোমাকে চেনাতে হবেন, কিন্তু মায়ের জিনিস-পত্র যা যা আছে দেখিয়ে দাও দিকি । পূজারী একটু লজ্জিত হইয়া কহিল, দেখিয়ে দিতে হবে বই কি, সমস্তই একটি একটি করে দেখাতে হবে । লিষ্টির সঙ্গে মিলিয়ে সব ঠিক আছে, কোন চিস্তা নেই । মা, ওই দিকে বড় সিন্ধুক দেখা যাচ্চে, ওতে পূজার পাত্র এবং সমস্ত পিতল ఫెt