পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/১০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰই পচিশখানি হাত বাড়াইয়া দিতে ষোড়শী পিছাইয়া গিয়া হাসিয়া কহিল, ওরে, অর্ত গুলো পায়ে নেই রে নেই, আবার আমাকে নাইয়ে মারিসনে, আমার মন্দিরের বেলা হয়ে গেছে। কি হয়েচে বল ? ইহারা প্রায় সকলেই তাহার প্রজা ; হাত জোড় করিয়া কহিল, মা আমরা যে মারা যাই! সৰ্ব্বনাশ হয় যে | তাহাদের মুখের চেহারা যেমন বিষন্ন তেমনি শুষ্ক । কেহ কেহ বোধ করি সারারাত্রি ঘুমাইতে পৰ্য্যস্ত পারে নাই। এই সকল মুখের প্রতি চাহিয়া তাহার নিজের হাসি-মুখখানি চক্ষের পলকে মলিন হইয়া গেল। বুড়া বিপিন মাইতি অবস্থা ও বয়সে সকলের বড় ; ইহাকেই উদ্বেগু করিয়৷ ষোড়শ জিজ্ঞাসা করিল, হঠাৎ কি সৰ্ব্বনাশ হ’লো বিপিন ? বিপিন কহিল, কে একজন মাদ্রাজী সাহেবকে সমস্ত দক্ষিণের মাঠকে মাঠ জমিদার-তরফ থেকে বিক্রি করা হচ্চে । আমাদের যথাসৰ্ব্বস্ব । কেউ তা হলে আর বঁচিব না—না খেতে পেয়ে সবাই শুকিয়ে মারা যাবো মা ! ব্যাপারটা এমনি অসম্ভব যে, ষোড়শী হাসিয়া ফেলিয়া কহিল, তা হলে তোদের গুকিয়ে মরাই ভাল। ধা, বাড়ি যা, সকালবেলা আর আমার সময় নষ্ট করিসূনে । কিন্তু তাহার হাসিতে কেহ যোগ দিতে পারিল না, সকলে সমস্বরে বলিয়া উঠিল, ন মা, এ সত্যি । ষোড়শী বিশ্বাস করিতে পারিল না, বলিল, না রে না, এ কখনো সত্যি হতেই পারে না, তোদের সঙ্গে সে তামাসা করেচে। বিশ্বাস না করিবার তাহার বিশেষ হেতু ছিল। একে ত এই সকল জমি-জমা তাহারা পুরুষানুক্রমে ভোগ করিয়া আসিতেছে, তাহাতে সমস্ত মাঠ শুধু কেবল বীজগ্রামের সম্পত্তিও নহে। ইহার কতক অংশ ৮চণ্ডীমাতার এবং কিছু রায়মহাশয়ের খরিদা। অতএব জীবাননা একাকী ইচ্ছা করিলেও ইহা হস্তান্তর করিয়া দিতে পারেন না। কিন্তু বৃদ্ধ বিপিন মাইতি যখন সমস্ত ঘটনা বিধৃত করিয়া কহিল, কাল কাছারি-বাটতে সকলকে ডাকাইয়া আনিয়া নন্দী মহাশয় নিজের মুখে জানাইয়া দিয়েছেন এবং তথায় জনাৰ্দ্দন ও তারাদাস উভয়েই উপস্থিত ছিলেন, এবং দেবীর পক্ষ হইতে তাহার পিতা তারাদাসই দলিলে দস্তখত করিয়া দিয়াছেন, তখন অপরিসীম ক্রোধ ও বিস্ময়ে যোড়শী বহুক্ষণ পৰ্য্যন্ত স্তন্ধ হইয়া রহিল। অবশেষে ধীরে ধীরে কহিল, তাই যদি হয়ে থাকে তোরা আদালতে মালিশ কর গে। বিপিন নিরুপায়তাবে মাথা নাড়িতে নাড়িতে কহিল, তাও কি হয় মা ? রাজার গঙ্গে কি বিবাদ করা চলে ? কুমীরের সঙ্গে শত্রুত করে জলে বাস করলে যার যা কিছু আছে—ভিটেটুকু পৰ্য্যন্তও থাকবে না ! ಇy