পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/১১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ নেই। তারা যার প্রজা তিনি নিজে দলিলে দস্তখত করে দিয়েচেন । তাকে কেউ ঠেকাতে পারবে না । ষোড়শী মুখ তুলিয়া কহিল, আপনার আর কোন হুকুম আছে ? জীবানন্দ স্পষ্ট অনুভব করিলেন, বলিবার সময়ে তাহার ওষ্ঠাধর তাচ্ছিল্যের আভাসে যেন ফুরিত হইয়া উঠিল, কিন্তু সংক্ষেপে জবাব দিয়া কহিলেন, না, আর কিছুই নেই। ষোড়শী কহিল, তা হলে দয়া করে এইবার আমার কথাটা শুনুন । বল । ষোড়শী কহিল, কাল দেবীর অম্বাবর সম্পত্তি বুঝিয়ে দেবার সময় আমার নেই এবং পরশু মন্দিরের কোথাও সভা-সমিতির স্থানও হবে না । এগুলো এখন বন্ধ রাখতে হবে । শিরোমণি অনেক সহিয়াছিলেন, আর পারিলেন না। সহসা চীৎকার করিয়া বলিয়া উঠিলেন, কখনো না, কিছুতেই নয় । এ-সব চালাকি আমাদের কাছে খাটবে না বলে দিচ্চি.এবং শুধু জীবানন্দ ছাড়া যে যেখানে ছিল ইহার প্রতিধ্বনি করিয়া উঠিল। জনাৰ্দ্দন রায় এতক্ষণ কথা কহেন নাই ; কলরব থামিলে অকস্মাৎ উষ্মার সহিত বলিয়া উঠিলেন, তোমার সময় এবং মন্দিরের ভেতর জায়গা কেন হবে না শুনি ঠাকরুণ ? ইহার শেষ কথাটার শ্লেষ উপলব্ধি করিয়াও বোড়শী সহজ বিনীতকণ্ঠে কহিল, আপনি ত জানেন রায়মশাই, এখন গাজনের সময় যাত্রীর ভিড়, সন্ন্যাসীর ভিড়, আমারই বা সময় কোথায়, তাদেরই বা সরাই কোথায় ! সত্যই তাই। এবং এই নিবেদনের মধ্যে যে কিছুমাত্র অসঙ্গতি নাই, বোধ করি জীবানন্দ তাহ বুঝিলেন, কিন্তু দেশের যাহারা, তাহারা নাকি বদ্ধপরিকর হইয়া আসিয়াছিলেন, তাই এই নম্র কণ্ঠস্বরে উপহাস কল্পনা করিয়া একেবারে জলিয়া গেলেন। জনাৰ্দ্দন রায় আত্মবিশ্বত হইয়া চীংকার করিয়া কহিলেন, হতেই হবে। আমি বলচি হতে হবে এবং দলের মধ্যে হইতে একজন কটুক্তি পৰ্যন্ত করিয়া ফেলিল । কথা ষোড়শীর কানে গেল এবং মুখের ভাব তাহার সঙ্গে সঙ্গেই অত্যন্ত কঠোর ও গম্ভীর হইয়া উঠিল। পলকমাত্র চুপ করিয়া থাকিয়া জীবানন্দকে বিশেষ করিয়া উদ্দেশ করিয়া কহিল, ঝগড়া করতে আমার ঘুণ বোধ হয়। তবে ও-সব করবার এখন সুযোগ হবে না, এই কথাটা আপনার অনুচরদের বুঝিয়ে বলে দেবেন। আমার সময় অল্প ; আপনাদের কাজ মিটে থাকে ত আমি চললাম । 》,