পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/১১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ ঘোড়শীর ছিল, কারণ দেবতার ক্ৰোধোন্দ্রেকের দায়িত্ব আর যে কেহ মাথায় করিতে চা’ক, জনাৰ্দ্দন চাহিবে না সে নিশ্চিত জানিত । কিন্তু এইবার } তবুও দিনগুলা এমনি নিঃশব্দে কাটিতে লাগিল যেন আর কোন হাঙ্গামা নাই, সমস্ত মিটিয়া গেছে। কিন্তু সত্য সত্যই মিটিয়া যে কিছু যায় নাই, অলক্ষ্যে গোপনে কঠিন কিছু একটা দানা বাধিয়া উঠিতেছে, এ আশঙ্কা শুধু ষোড়শীর নহে, মনে মনে প্রায় সকলেরই ছিল । সেই মাঠ-সংক্রাস্ত কৃষকদের কাছে আজ সে সংবাদ পাঠাইয়া দিয়াছিল। কথা ছিল তাহারা দেবীর সন্ধ্যা-আরতির পরে মন্দির-প্রাঙ্গণে জমা হইবে ; কিন্তু আরতি শেষ হইয়া গেল, রাত্রি আটটা ছাড়াইয়া নয়টা এবং নয়টা ছাড়াইয়া দশটা বাজিতে চলিল, কিন্তু কাহারও দেখা নাই। প্রণাম করিতে যাহারা নিত্য আসে, প্রসাদ লইয়া একে একে তাহারা প্রস্থান করিল, পূজার অন্তৰ্হিত হইল, এবং মন্দিরের ভূত্য দুয়ার বন্ধ করিবার অনুমতি চাহিল । আর অপেক্ষা করিয়া ফল নাই, এবং কি একটা ঘটিয়াছে তাহাতেও ভুল নাই ; কিন্তু ঠিক তাহ জানিতে না পারিয়া সে অত্যন্ত উদ্বেগ অনুভব করিতে লাগিল । এমনি সময় ধীরে ধীরে সাগর আসিয়া উপস্থিত হইল। তাহাকে একাকী দেখিয়া ষোড়শী ব্যগ্র হইয়া প্রশ্ন করিল, এত দেরি ষে সাগর ? কিন্তু আর কেউ ত আসেনি ? এরা কি তবে খবর পায়নি বাবা ? সাগর কহিল, পেয়েচে বই কি মা । আমি নিজে গিয়ে সকলের ঘরে ঘরে তোমার ইচ্ছে জানিয়ে এসেচি। যোড়শী শঙ্কিত হইয়া কহিল, তবে ? সাগর বলিল, আজ বোধকরি কেউ আর সময় করে উঠতে পারলে না । হজুরের কাছারি-বাড়িতে ষোল-আনার পঞ্চায়েতিছিল, তা এইমাত্র সাঙ্গ হ’লো। পঞ্চু, অনাথ, রামময়, নবকুমার, অক্ষয় মাইতি, মায় আমাদের বুড়ো বিপিন-বুড়ে পৰ্যন্ত তার সাজোয়ান ব্যাটাদের নিয়ে । কেউ বাদ যায়নি মা, আমি একটা বাতাপি নেবুগাছের তলায় দেওয়াল ঘেষে দাড়িয়েছিলাম । যোড়শী কহিল, ভাল করিসনি সাগর, কেউ দেখে ফেললে— সাগর হাসিয়া বলিল, একা-যাইনি মা, ইনি সঙ্গে ছিলেন, বলিয়া সে বা হাতের সুদীর্ঘ বংশদওখানি সস্নেহে সসন্ত্রমে দক্ষিণ হস্তে গ্রহণ করিল। যোড়শী কহিল, কিন্তু এইখানে হবার যে কথা ছিল ? সাগর কহিল, কথাও ছিল, হুজুরের ভোজপুরীগুলোর ইচ্ছেও ছিল কিন্তু গ্রামের কেউ রাজী হলেন না। তারা ত এদিককার মানুষ—আমাদের খুড়ো-ভাইপোকে হয়ত চেনেন । ষোড়শী ক্ষণকাল চুপ করিয়া থাকিয়া জিজ্ঞাসা করিল, সভায় কি স্থির হলো ? > ●辑