পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/১১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জেনা-পাওনা ষোড়শীর চোখের দৃষ্টি একবার একটুখানি কোমল হইয়াই আবার তেমনি জলিতে লাগিল, কহিল, আচ্ছা সাগর, আমি ত শুনেচি তোদের প্রাণের ভয় করতে নেই ? সাগর সহাস্তে কহিল, মিথ্যে গুনেচ তাও ত আমি বলচিনে মা । যোড়শী কছিল, কেবল প্রাণ দিতেই পারিস্, আর নিতে পারিস্নে ? সাগর কহিল, একটা হুকুম দিয়ে আজ রাত্রেই কেন যাচাই কর না মা ? এই বলিয়া সে ষোড়শীর মুখের উপর দুই চোখ মেলিয়া ধরিতে যোড়ণী বিস্ময়ে ও ভয়ে একেবারে নির্বাক হইয়া গেল । সাগরের চাহনি এক পলকে বদলাইয়া গেছে । সেই স্বাভাবিক দীপ্তি নাই, সে তেজ নাই, সে কোমলতা কোথায় অন্তহিত হইয়াছে —নিম্প্রভ, সঙ্কুচিত গভীর দৃষ্টি—এ ষেন আর সে সাগর নয়, এ যেন আর কেহ । সাগর কথা কহিল। কণ্ঠস্বর শাস্ত কঠিন, অত্যন্ত ভারি। কহিল, রাত বেশি হয়নি —ঢের সময় আছে। মা চণ্ডীর কপাট এখনো খোলা আছে মা, আমি তোমার হুকুম শুনতে পেয়েচি। বেশ, তাই হবে মা, পাপের শেষ করে দেব—সকালেই শুনতে পাবে, তোমার সাগর সর্দার মিছে অহঙ্কার করে যায়নি। তাহার পিতৃপিতামহের হাতের সুদীর্ঘ লাঠিখানা ত ষোড়শীর পায়ের কাছে পড়িয়া ছিল, হেঁট হইয়া তৎক্ষণাৎ তুলিয়া লইয়া সোজা হইয়া দাড়াইল । ষোড়শী কথা কহিতে গেল, তাহার ঠোঁট কঁাপিতে লাগিল, নিষেধ করিতে চাহিল, কণ্ঠে স্বর ফুটিল না, ভূমিকম্পের সমুদ্রের মত অকস্মাং সমস্ত বুক জুড়িয়া দোল উঠিল, এবং নিমিষের জন্য সাগরের এই একান্ত অপরিচিত ঘাতকের মূৰ্ত্তি তাহার চোখের উপর হইতে অদৃপ্ত হইয়া গেল। সাগর কি যেন একটা কহিল, কিন্তু সে বুঝিতে পারিল না, কেবল এইটুকুমাত্র উপলব্ধি করিল যে, সে ভূমিষ্ঠ প্ৰণাম করিয়া দ্রুতবেগে বাহির হইয়া যাইতেছে। ריכל যোড়শীর যখন চেতনা ফিরিয়া আসিল, তখন সাগর চলিয়া গেছে। মন্দিরের ভূত্য ডাকিয়া কহিল, মা, এবার দোর বন্ধ করি ? কর, বলিয়া সে চাবির জন্য দাড়াইয়া রহিল। ছেলেবেলা হইতে জীবনটা তাহার ষথেষ্ট মুখেরও নয়, নিছক আরামেও দিন কাটে নাই ; বিশেষ করিয়া যে অশুভ মুহুর্তে বীজগ্রামের নূতন জমিদার চণ্ডীগড়ে পদার্পণ করিয়াছিলেন, তখন হইতে উপজবের ঘূণি-হাওয়া তাহাকে অমৃক্ষণ দেখিয়া নিরস্তর অশাস্ত, চঞ্চল ও বিশ্রামহীন করিয়া রাখিয়াছে। তবুও সে-সকল সমূত্রের কাছে গোম্পদের ন্যায়, আজ সেখানে እ ♥ፃ