পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শরৎ-সাহিত্য-সংগ্রহ

বালিশের তলা হইতে একটা নেপালী কুকরির কিয়দংশ দেখা যাইতেছে এবং তাহারই সন্নিকটে একটা খোলা বাক্সের মধ্যে একজোড়া পিস্তল সাজান রহিয়াছে।

 এককড়ি ভূমিষ্ঠ হইয়া প্রণাম করিয়া হাতজোড় করিয়া দাঁড়াইল। তাহার মনিব কহিলেন, তোমার নাম এককড়ি নন্দী? তুমিই এখানকার গোমস্তা?

 ভয়ে এককড়ির হৃৎপিণ্ড দুলিতেছিল, সে অস্ফুট কম্পিতকণ্ঠে ঘাড় নাড়িয়া বলিল, হুজুর!

 সে ভাবিয়া আসিয়াছিল এইবার এই বাড়ির কথা উঠিবে, কিন্তু হুজুর তাহার কোন উল্লেখ করিলেন না, শুধু জিজ্ঞাসা করিলেন, তোমার কাছারির তসিল কত?

 এককড়ি বলিল, আজ্ঞে, প্রায় হাজার-পাঁচেক টাকা।

 হাজার-পাঁচেক? বেশ আমি দিন-আষ্টেক আছি, তার মধ্যে হাজার-দশেক টাকা চাই।

 এককড়ি কহিল, যে আজ্ঞে।

 তাহার মনিব বলিলেন, কাল সকালে তোমার কাছারিতে গিয়ে বসব—বেলা দশটা-এগারোটা হবে—তার পূর্বে আমার ঘুম ভাঙ্গে না। প্রজাদের খবর দিও।

 এককড়ি সানন্দে মাথা নাড়িয়া কহিল, যে আজ্ঞে। কারণ ইহা বলা বাহুল্য যে খাজনার অতিরিক্ত টাকা আদায়ের গুরুভারে এককড়ি আপনাকে নিরতিশয় প্রপ্রীড়িত বা বিপন্ন জ্ঞান করে নাই। সে পুলকিত-চিত্তে কহিল, আমি রাত্রের মধ্যেই আজ চতুর্দিকে লোক পাঠিয়ে দেব যেন কেউ না বলতে পারে সে সময়ে খবর পায় নি।

 জীবানন্দ মাথা হেলাইয়া সম্মতি দান করিলেন, এবং মদের পাত্রটা মুখে তুলিয়া সমস্তটা এক চুমুকে পান করিয়া সেটা ধীরে ধীরে রাখিয়া দিতে দিতে বলিলেন, এককড়ি, তোমাদের এখানে বোধ করি বিলিতী মদের দোকান নেই! তা না থাক, যা আমার সঙ্গে আছে তাতেই এ ক’টা দিন চলে যাবে, কিন্তু মাংস আমার রোজ চাই।

 এককড়ি প্রস্তুত হইয়াই ছিল, কহিল, এ আর বেশী কথা কি হুজুর, মা চণ্ডীর সরেস মহাপ্রসাদ আমি রোজ হুজুরে দিয়ে যাবো।

 হুজুর খুশী হইয়া কহিলেন, বেশ, তার পরে বোতল হইতে কতকটা সুরা পাত্রে ঢালিয়া তাহা পান করিলেন, এবং মুখ মুছিতে মুছিতে বলিলেন, আরও একটা কথা আছে এককড়ি।

 এককড়ির সাহস বাড়িতেছিল, কহিল, আজ্ঞে করুন?