পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/১৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ যোড়শী কহিল, দেখুন অনেক রাত্ৰি হ’লো, এখনো আমার অাহিক পৰ্য্যস্ত সারা হয়নি— পুরোহিতের কাশি এবং পায়ের শব্দ বাহিরে শোনা গেল ; সে স্বারের কাছে আসিয়া বলিল, মা, সকলের সম্মুখে মন্দিরের দোর বন্ধ করে চাবিটা আমি তারাদাস ঠাকুরের হাতেই দিলাম। রায়মশায়, শিরোমণি–এর দাড়িয়েছিলেন। ষোড়শী কহিল, ঠিকই হয়েছে। তুমি একটু দাড়াও, আমি সাগরের ওখানে একবার যাবো, বলিয়া সে উঠিয়া দাড়াইল । জীবানন্দ নিঃশব্দে দাড়াইয়া উঠিয়া কহিল, এগুলোও তা হলে তুমি রায়মশায়ের কাছেই পঠিয়ে দিয়ে। ষোড়শী ঘাড় নাড়িয়া কহিল, না, সিন্দুকের চাবি আর কারও হাতে দিয়েই আমার বিশ্বাস হবে না । w শুধু আমাকেই হবে ? ষোড়শী ইহার কোন উত্তর না দিয়া ঘরের তালাটা হাতে লইয়া বাইরে আসিয়া দাড়াইল এবং জীবানন্দ বাহিরে আসিতেই কপাট বন্ধ করিয়া তাহার পায়ের কাছে গড় হইয়া প্রণাম করিয়া পুরোহিতের পিছনে পিছনে নি:শন্ধে প্রস্থান করিল। শুধু একাকী জীবানন্দ সেই অন্ধকার বারান্দায় ভূতের মত নিশ্চল হইয়া দাড়াইয়৷ রহিল। ২৩ ব্যারিস্টার সাহেব চলিয়া গেছেন, ষোড়শী চলিয়া যাইতেছে—মন্দিরের চবিতালা-সরঞ্জাম প্রভৃতি যাহা-কিছু মূল্যবান সমস্ত আদায় হইয়া গেছে, ইত্যাদি সংবাদ রাষ্ট্র হইয়া পড়িতে কিছুমাত্র বিলম্ব ঘটিল না। শিরোমণি আনন্দের আবেগে মুক্তকচ্ছ আলুথালু বেশে রায়মহাশয়ের সদরে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। নিৰ্ম্মলের যাবার সময়ে বিদায়ের পালাটা বিশেষ প্রীতিকর হয় নাই। মনে মনে বোধ করি এইসকল আলোচনাতেই জনাৰ্দ্দনের মুখমণ্ডল গম্ভীর ভাব ধারণ করিয়াছিল । কিন্তু সেদিকে লক্ষ্য করিবার অবস্থা শিরোমণির ছিল না, তিনি আশীৰ্ব্বাদের ভঙ্গিতে ডান হাত তুলিয়া গদগদ-কণ্ঠে কহিলেন; দীর্ঘজীবী হও ভায়া, সংসারে এসে বুদ্ধি ধরেছিলে বটে। জনাৰ্দ্দল মুখ তুলিয়া কহিলেন, ব্যাপার কি ?