পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/১৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেমা-পাওনা কিন্তু এত বড় বিরাগের হেতু ? প্রফুল্ল কছিল, বিরাগের হেতু আপনি। একটুখানি চুপ করিয়া থাকিয় কহিল, কি জানি এ-কথা আপনাকে শোনানো ভাল হবে কি না, কিন্তু ফকিরের বিশ্বাস আপনাকে তিনি মনে মনে অত্যন্ত ভয় করেন-পাছে কলহ-বিবাদের মধ্যে দিয়েও আপনার সঙ্গে মাখামাথি হয়ে যায়, এই তার সকলের চেয়ে বড় ভয় । নইলে দেশের লোককে তিনি ভয় করেননি । জীবানন্দ বিস্ফারিত চক্ষে তাহার প্রতি নিঃশবে চাহিয়া রহিল। প্রফুল্ল একটুখানি হাসিয়া কহিল, দাদা, ভগবান আপনাকেও বুদ্ধি বড় কম দেননি, কিন্তু সৰ্ব্বস্ব সমর্পণ করে কাল তিনিই মারাত্মক ভূল করলেন, কি হাত পেতে নিয়ে আপনিই মারাত্মক ভুল করলেন, সে মীমাংস আজ বাকী রয়ে গেল, যদি বেঁচে থাকি ত একদিন দেখতে পাবে আশা হয় । জীবানন্দ এ কথারও কোনও উত্তর দিল না, তেমনি নীয়বে বসিয়া রহিল । সন্ধ্যা হয় হয়, বেহার পাত্র ভরিয়া মদ আনিয়া উপস্থিত করিল ; জীবানন্দ হাত নাড়িয়া কছিল, নিয়ে যা—দরকার নেই । তৃত্য বুঝিতে না পারিয়া দাড়াইয়া থাকিলে প্রফুল্ল কহিল, কখন দরকার সেইটা বলে দিন না ? জীবানন্দ সহসা কখন যেন অন্তমনস্ক হইয়া পড়িয়াছিল, প্রফুল্লর প্রশ্নে চোখ তুলিয়া কহিল, এখন ত নিয়ে যা-দরকার হলে ডেকে পাঠাবো । সে চলিয়া যাইতেছিল, জীবানন্দ ভাকিয়া কহিল, ই রে, তোদের চা আছে ? প্রফুল্ল কহিল, শোন কথা ? চা নেই ত আমি বেঁচে আছি কি করে ? তবে, তাই এক বাটি নিয়ে আয় । বেহার প্রস্থান করিলে প্রফুল্ল প্রশ্ন করিল, অকস্মাৎ অমৃতে অরুচি যে ? জীবানন্দ বলিল, অরুচি নয় –কিন্তু আর খাবো না । প্রফুল্ল হাসিল, এবং ক্ষণেক পূৰ্ব্বে তাহারই প্রতি প্রযুক্ত বিক্রপ ফিরাইয়া দিয়া কহিল, এই নিয়ে ক’বার হলো দাদা ? জীলানন্দ রাগ করিল না, সেও হাসিয়া তাহারই অনুসরণ করিয়া কহিল, এ মীমাংসাটাও আজ না হয় বাকী থাক প্রফুল্ল, যদি বেঁচে থাকে ত একদিন দেখতে পাবে আশা করি । প্রফুল্ল মুখ টিপিয়া শুধু একটু হাসিল, প্রত্যুত্তর করিল না। চাকর আলো দিয়া গেল । ক্রমশঃ সন্ধ্যার অন্ধকায় যখন বাহিরে গাঢ় হইয়া জালিতেছিল, জীবানন্দ হঠাৎ দাড়াইয়া কহিল, যাই একটু ঘুরে জাসি— প্রফুর আশ্চৰ্য্য হইয়া কছিল, কই, কাপড় ছাড়লেন না ? Soo - , ,