পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/১৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ থাকগে । আপনার সহচর ? গাদাপিস্তলটি ? সেও থাক । আজ একলাই ঘুরতে চললাম। প্রফুল্ল ভয়ানক আপত্তি করিয়া বলল, না, না, সে হয় না দাদা । অন্ধকার রাত, পথে-ঘাটে আপনার অনেক শত্রু ? এই বলিয়া সে তাড়াতাড়ি দেরাজ হইতে পিস্তল বাহির করিয়া হাতে গুজিয়া দিতে গেল । জীবানন্দ দুই পা পিছাইয়া গিয়া কছিল, ওকে আর আমি ছুচ্চিনে প্রফুল্ল— প্রফুল্ল বিস্ময়ে অবাক হইয়া কহিল, হঠাৎ হ’লো কি দাদা ? না হয় পাইকদের ডেকে দিই, তাদের কেউ সঙ্গে যাক । জীবানন্দ মাথা নাড়িয়া কহিল, না, তাও না। আজ থেকে আমি এমনি একলা বার হবে, যেন কোথায় কোন শক্র নেই আমার । আর আমার থেকে কারও কোন ভয় না হোক ; তার পরে যা হয় তা আমার ঘটুক—আমি কারুর কাছে নালিশ করব না। এই বলিয়া সে অন্ধকারে ধীরে ধীরে একাকী বাহির হইয়া গেল । $ 8 পরিপূর্ণ স্বরাপত্ৰ অসম্মানে ফিরিয়া গেল দেখিয়া প্রফুল্ল ব্যঙ্গ করিয়াছে। করিবারই কথা। লিভারের দুঃসহ যাতনায় ও চিকিৎসকের তাড়নায় শয্যাগত জীবানন্দের জীবনে এ অভিনয় আরও হইয়া গেছে ; কিন্তু স্বেচ্ছায়, স্বস্বদেহে মদের বদলে চ খাইয়া বাটীর বাহির হওয়া খুব সম্ভব এই প্রথম । সমস্ত জগৎটা তাহার বিস্বাদ ঠেকিল, এবং শান্তি-কুঞ্জের ঘনছায়ায় ঘেরা পথের মধ্যে যেদিকে চাহিল, সেইদিক হইতেই একটা অস্ফুট কান্নার স্বর আসিয়া যেন তাহার কানে বাজিতে লাগিল। তাহার অভ্যস্ত জীবনের নীচে তাহারই যে আরও একটা সত্যিকার জীবন আজও বাচিয়া আছে এ-খবর সে জানিত না । গেট পার হইয়া যখন মাঠের পথে বাহির হইয়া আলিল, তখন সন্ধ্যার ধূসর আকাশ ধীরে ধীরে রাত্রির অন্ধকারে পরিণত হইতেছিল। একদিকে শীর্ণ নদীর বালুকাময় শুষ্ক সৈকত আঁকিয়া বাকিয়া দিগন্তে অদৃগু হইয়াছে, আর একদিকে বৈশাখের শম্প শস্তহীন বিস্তৃত ক্ষেত্র চণ্ডীগড়ের পাদমূলে গিয়া মিশিয়াছে। পথে পথিক নাই, মাঠে কৃষকদের আর দেখা যায় না, স্বাখাল বালকের গোচারণের কাজ আজিকার মত শেষ করিয়া গৃহে ফিরিয়া গেছে—সান্ধা আকাশতলে জনহীন ভূখণ্ডের এই স্তন্ধ বিষণ্ণ মূৰ্ত্তি আজ তাহার কাছে অত্যন্ত করুশ ও অদ্ভুত মনে হইল। এই পথে, এমনি নির্জন সদ্ধায় 3®•