পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/১৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেনা-পাওনা সহসা কালো আকাশপটে চওঁী-মন্দিরের চূড়া দেখা দিল। এতদূখ আসিয়াছে তাহার ইস ছিল না ; আরও কাছে আসিয়া মন্দিরের ছোট দরজাটা তখনও খোলা আছে দেখিতে পাইয়া নিঃশব্দে ভিতরে প্রবেশ করিল। দেবীর আরতি অনেকক্ষণ শেষ হইয়া গেছে, মন্দিরের দ্বার রুদ্ধ, সমস্ত প্রাঙ্গণে ঘোর অন্ধকার, শুধু নাট-মন্দিরের একধারে মিট মিট করিয়া একটা প্রদীপ জ্বলিতেছে । জীবানন্দ নিকটে গিয়া দেখিল জন-চার-পাঁচ লোক মশার ভয়ে আগাগোডা মুড়ি দিয়া ঘুমাইতেছে, শুধু কে একজন থামের আড়ালে চুপ করিয়া বসিয়া মালা জপ করিতেছে। জীবাননা আরও একটু কাছে গিয়া লোকটিকে দেখিবার চেষ্টা করিয়া জিজ্ঞাসা করিল, কে তুমি ? লোকটি জীবানন্দের ধপধপে শাদা পরিচ্ছদ অন্ধকারেও অনুভব করিয়া উহাকে ভদ্র ব্যক্তি বলিয়া বুঝিল, কহিল, আমি একজন যাত্রী বাৰু। ও:-যাত্রী ! কোথায় যাবে ? আঙ্কে, আমি যাবো শ্ৰীশ্ৰীপুরীধামে। কোথা থেকে আসচ ? এরা বৃঝি তোমার সঙ্গী ? এই বলিয়া জীবানন্দ ঘুমন্ত লোকগুলিকে দেখাইয়া দিল । লোকটি ঘাড় নাড়িয়া কহিল, আজ্ঞে না, আমি একাই আসছি মানভূম জেলা থেকে। এদের কারও বাড়ি মেদিনীপুর, কারও বাড়ি আর কোথাও—কোথায় যাবে তাও জানিনে। দুজন ত কেবল আজ দুপুরবেলাতে এসেচে। জীবানন্দ জিজ্ঞাসা করিল, আচ্ছ, কত লোক এখানে রোজ আসে ? যারা থাকে তারা বেলা খেতে পায়, না ? - লোকটা বিব্রত হইয়া পড়িল। লজ্জিতভাবে কহিল, কেবল খাবার জন্তেই সবাই থাকে না বাৰু। পায়ে ইটো আমার অভ্যাস ছিল না। তাই ফেটে গিয়ে ঘায়ের মত হ’ল । মা ভৈরবী নিজের চোখে দেখে হুকুম দিলেন, যতদিন না সারে এখানে থাকো । জীবানন্দ কহিল, বেশ ত, থাকো না । জায়গায় ত আর অভাব নেই হে! কিন্তু মা ভৈরবী ত আর নেই শুনতে পেলাম। জীবানন্দ হাসিয়া কহিল, এরই মধ্যে শুনতে পেয়েচ ? তা না-ই তিনি থাকলেন, তার হুকুম ত আছে। তোমাকে যেতে বলে সাধ্য কায় ? তোমার যত দিন না পা সারে, তুমি থাকো —এই বলিয়া জীবানন্দ তাহার কাছে আসিয়া বসিল । লোকটা প্রথমে একটু ভয় ও সঙ্কোচ অনুভব করিল, কিন্তু সে ভাব বৃছিল না। এবং দেখিতে দেখিতে অন্ধকারে এই নির্জন নিস্তন্ধ দেবায়তনের একাস্তে পরাক্রান্ত এক ভূস্বামী ও দীন গৃহহীন আর এক ভিক্ষুকের সুখদু:খের আলোচনা একেবারে ঘনিষ্ট হইয়া উঠিল। লোকটার নাম উমাচরণ, জাতিতে কৈবর্ত, বাট আগে ছিল Yo