পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/১৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেনা-পাওনা অথচ চিরদিন ইহাকেই উপেক্ষা করিয়া, অপমান করিয়া, মিথ্যার পরে মিথ্যা জমী করিয়া, সে ষে প্রাচীর গড়িয়া তুলিয়াছে, আজ তাহাকে লঙ্ঘন করিবার পথ তাহার কই ? হঠাৎ সম্মুখেই দেখিতে পাইল কে একজন দ্রুতপদে চলিয়াছে। তাহাকে অন্ধকারে চিনিতে বিলম্ব হইল না, ডাকিল, অলকা ? ষোড়শী চমকিয়া দাড়াইল। এ যে জীবানন্দ তাহ সে ডাক শুনিয়াই বুঝিয়াছিল। একটু সরিয়া আসিয়া তিক্তকণ্ঠে জিজ্ঞাসা করিল, আপনি এখানে কেন ? জীবানন্দ উঠিয়া দাড়াইয়া কহিল, কি জানি, এমনিই বসে ছিলাম। তুমি যাত্রার আগে ঠাকুর-প্রণাম করতে যাচ্চো, না ? চল, আমি তোমার সঙ্গে যাই। এই একটা বেলার মধ্যে তাহার কণ্ঠস্বরে কি যে অদ্ভুত পরিবর্তন ঘটিয়াছে, ষোড়শী বিস্ময়ে মৌন হইয়া রহিল। ক্ষণেক পরে কহিল, আমার সঙ্গে যাবার বিপদ আছে, সে ত আপনি জানেন । জীবানন্দ বলিল, জানি । কিন্তু আমার পক্ষ থেকে একেবারে নেই । আজ আমি একা এবং সম্পূর্ণ নিরস্তু-একগাছ লাঠিও সঙ্গে নেই। ষোড়শী কহিল, শুনেচি। প্রফুল্লবাৰু আপনাকে খুজতে বেরিয়েছিলেন, তার কাছে খবর পেলাম আজ আপনি নিরস্ত্র, বাড়ি থেকে একলা বেরিয়ে গেছেন, এবং— এবং ঝোকের উপর মদ না খেয়ে বার হয়ে গেছি, না ? ষোড়শী কহিল, ই । কিন্তু চণ্ডীগড়ে এ-কাজ আর আপনি ভবিস্তুতে করবেন না । জীবানন্দ কহিল, এ-কাজ আমি প্রত্যহ করৰ এবং যতদিন বঁাচব-করব। প্রফুল্ল তোমাকে এত কথা বলেচে, এ-কথা বলেনি যে, এ-জীবনে আর যাই কেন না স্বীকার করি পৃথিবীতে আমার শক আছে এ আমি একদিনও আর স্বীকার করব Fil ষোড়শী স্তন্ধ হইয়া দাড়াইয়া রহিল। ইহার যুক্তি লইয়াও তর্ক করিল না, এ-কথার স্থায়িত্ব লইয়াও প্রশ্ন করিল না। জীবানন্দের মুখের চেহারা অন্ধকারে সে দেখিতে পাইল না, কিন্তু এই তাহার অদ্ভূত কণ্ঠস্বর নিশীথে এই নির্জন প্রান্তরের মধ্যে তাহার দুই কান ভরিয়া এক আশ্চৰ্য্য স্বরে বাজিতে লাগিল। কিছুক্ষণ পরে কহিল, আমার সঙ্গে মন্দিরে গিয়ে কি হবে ? জীবানন্দ কহিল, কিছুই না। শুধু যতক্ষণ আছ, সঙ্গে থাকব, তার পরে যখন যাবার সময় হবে তোমাকে গাড়িতে তুলে দিয়ে আমি বাড়ি চলে যাবো। ষোড়শী তৎক্ষণাং জবাব দিতে পারিল না। জীবানন্দ কহিল, যাবার দিনে আজ আর আমাকে অবিশ্বাস করে না অলকা। আমার জীবনের দাম তুমি ত দান, እቂፃ