পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/১৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেনা-পাওনী ষোড়শী বলিল, না। তবে সকল অপরাধ আমার এইখানে দাড়িয়ে ক্ষমা করে যাও । কিন্তু তাতে কি আপনার খুব বেশি প্রয়োজন আছে ? জীবানন্দ ক্ষণকাল চিন্তা করিয়া বলিল, এর উত্তর আজ দেবার আমার শক্তি নেই। এখন কেবল এই কথাই সমস্ত মন ছেয়ে আছে অলকা, কি করলে তোমাকে একটা দিনও ধরে রাখতে পারি । উঃ—নিজের মন যার পরের হাতে চলে যায়, সংসারে তার চেয়ে নিরুপায় বুঝি আর কেউ নেই। আমার সবচেয়ে বড় দুঃখ, লোকে জানবে আমি তোমাকেই শাস্তি দিয়েচি, তুমি সহ করেচ, আর নিঃশব্দে চলে গেছ । তুমি যাবার আগে তোমার মা-চণ্ডীকে জানিয়ে যাও যে, এর চেয়ে মিথ্যে আর নেই। ষোড়শী কোন উত্তর না দিয়ে নিঃশব্দে বাহির হইয়া আসিবার মুখে সহসা জীবানন্দ দুই হাত প্রসারিত করিয়া কহিল, তোমার ঠাকুরের স্বমুখে দাড়িয়ে আজ এই কথাটি আমাকে বলে দাও, কি করলে তোমাকে আমি কেবল একটি দিন কাছে রাখতে পারি। তার পরে তুমি— ষোড়শী পিছাইয়া গিয়া কহিল, চৌধুরীমশায়, আপনার পাইক-পিয়দার। কি কেউ নেই যে এত অনুনয়-বিনয় ? আপনি ত জানেন, আমি কারও কাছে নালিশ করব না । জীবানন্দ পথ ছাড়িয়া সরিয়া দাড়াইল । রাগ করিল না, প্রতিঘাত করিল না, সবিনয়ে ধীরে ধীরে কহিল, তুমি যাও, অসম্ভবের লোভে আর তোমাকে পীড়ন করব না। পাইক-পিয়াদা সবাই আছে অলকা, কিন্তু যে নিজে ধর দেবে না, জোর করে ধরে রেখে তার বোঝা বয়ে বেড়াবার জ্যের আমার গায়ে নেই । ষোড়শী পথ ছাড়া পাইয়াও পা বাড়াইল না, কহিল আমি কোথায় যাচ্চি সে কৌতুহল বোধ করি আপনার নেই ? জীবানন্দ কহিল, কৌতুহল ? বোধ হয় তার সীমা নেই—কিন্তু তাতেও আর জালা আর নেই অলকা। আমি কেবল এই কামনা করি, সেখানে কষ্ট যেন তোমাকে কেউ না দেয়। তোমার প্রতি যারা বিরূপ তারা যেন তোমাকে সম্পূর্ণ ভুলে থাকতে পারে। হঠাৎ গলাটা যেন তাহার ধরিয়া আসিল, কিন্তু নিজের দুৰ্ব্বলতাকে আর সে প্রশ্রয় দিল না, মূহূর্তে সামলাইয়া ফেলিয়া কহিল, আমি জানি, যে লোক স্বেচ্ছায় ত্যাগ করে যায়, তার সঙ্গে লড়াই চলে না । যেদিন আমাদের হাতে তোমার চাবি ফেলে দিলে সেইদিন তোমার কাছে আমাদের একসঙ্গে সকলের হার হলো । তোমার জোরের আজ অবধি নেই—তবু ত মানুষের মন বোঝে না। যতদিন বেঁচে থাকব, এ আশঙ্কা আমার কোনদিন ঘুঢ়বে না । - >心弼 atحسانه