পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/১৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দৈনা-পাওনা ঘরের কোণ হইতে একখানি কুশাসন গ্রহণ করিয়া মেঝের উপর পাতিয়া দিয়া বলিল, যদি অপরাধ না নেন ত— জীবানন্দ নিঃশব্দে উপবেশন করিয়া নীরব হইয়া রহিল। এতবড় শ্লেষের উত্তর না পাইয়া ষোড়শী মনে মনে বিস্মিত হইল। প্রদীপের আলো অতিশয় ক্ষীণ, হইয়া আসিতেছিল, ষোড়শী উজ্জল করিয়া দিয়া সেটা হাতে করিয়া জীবানদের মুখের কাছে আনিয়া মুহূৰ্ত্তকাল স্থিরভাবে থাকিয়া কহিল, কি ভাবচেন বলুন ত ? আমার ভাবনার কি অন্ত আছে ? অন্ত না থাকে আদি-ত আছে, তাই বলুন । জীবানন্দ মাথা নাড়িয়া কহিল, না, তাও নেই। যার অন্ত নেই তার আদিও থাকে না । ষোড়শীর মুখে আসিয়া পড়িল, বলে, ও-সকল কেবল দর্শনশাস্ত্রের বুলি—শুধু বাক্য—ও লইয়া সংসার চলে না, কিন্তু জীবানদের মুখ দেখিয়া তাহার নিজের মুখে স্বর বাহির হইল না । মনে মনে সে সত্যই বিস্ময়াপন্ন হইয়া অমুভব করিল, একট কেবল মুচতুর উত্তর দিবার জন্যই এ-কথা আজ সে বলে নাই, এ লইয়া আর বাদামুবাদ করিতে সে চাহে না । যাহাকে একান্তই নিফল বলিয়া বুঝিয়াছে সে লইয়া আর তর্ক কেন ? সেইখানে চুপ করিয়৷ কিছুক্ষণ বসিয়া থাকিয় ষোড়শী উঠিয়া গিয়া প্রদীপ রাখিয়া হাত ধুইল কহিল, আমার একটা অম্বরোধ রাখবেন ? কি ? এই ঘরে একদিন আমার কাছে আপনি চেয়ে খেয়েছিলেন, আজ তেমনি আমার চাওয়ায় আপনাকে খেতে হবে । দাও । ক্ষিদেও পেয়েচে । সে জানি। আমরা পুরুষমানুষের মুখের পানে চাইলেই টের পাই । বলিয়া যোড়শী জল-হাতে মুছিয়া লইয়া সামনেই ঠাই করিয়া দিল । দেবীর প্রসাদ আজ ছিল না, কিন্তু প্রজারা আজ তাহাকে অনেক-কিছু দিয়া গিয়াছিল, তাহাই পাতায় করিয়া সাজাইয়া আনিতে যোড়শী রান্নাঘরে চলিয়া গেলে একাকী চারিদিকে চাহিয়া সেদিনের সেই দোয়াত ও কলমটা কুলঙ্গির উপরে তাহার চোখে পড়িল । মিনিট দুই চিন্তা করিয়া সে তাহ পাড়িয়া আনিল। পকেট হইতে একখানা চিঠি বাহির করিয়া তাহার শাদা অংশটা ছিড়িয়া লইয়া প্রদীপের স্বমুখে সে পত্র লিখিতে বসিল । বোধ হয় তিন-চান্ধি ছন্ত্রের বেশি নয়, শেষ করিয়া ভাজ করিল, এবং উপরে ষোড়শীর নাম লিখিয় তাহ পকেটে রাখিয়া দিল। খানিক পরে খাবার » ጫ »