পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেনা-পাওনা মহাপাপিষ্ঠ স্তন্ধ গম্ভীর মুখে এই সন্ন্যাসিনীর নির্মীলিত চক্ষের প্রতি একদৃষ্টে চাহিয়া তাহার গৈরিক বস্ত্র, তাহার এলায়িত রুক্ষ কেশভার, তাহার পাণ্ডুর ওষ্ঠাবর, তাহার সবল মুস্থ ঋজু দেহ, সমস্তই সে যেন দুই বিস্ফারিত চক্ষু দিয়া নিঃশব্দে গিলিতে লাগিল NL নারীর একজাতীয় রূপ আছে যাহাকে যৌবনের অপর প্রাস্তে না পৌছিয়া পুরুষে কোনদিন দেখিতে পায় না। সেই অদৃষ্টপূৰ্ব্ব অদ্ভূত নারীরূপই আজ বোড়শীর তৈলহীন বিপৰ্য্যস্ত চুলে, তাহার উপবাস-কঠিন দেহে, তাহার নিপীড়িত যৌবনের রুক্ষতায়, তাহার উৎসাদিত প্রবৃত্তির শুষ্কতায়, শূন্যতায়, তাহার সকল অঙ্গে অঙ্গে এই প্রথম জীবানন্দের চক্ষের সম্মুখে উদঘাটিত হইয়া দেখা দিয়াছে । রমণীর দেহ লইয়া যাহার বীভৎস লীলা এই বিশ-বর্ষ ব্যাপিয়া অবাধে বহিয়াছে— কত শোভা, কত লজ্জা, কত মাধুৰ্য্যই যে এই ব্যাভিচারের ঘূর্ণাবর্তের অতলে তলাইয়াছে, তাহার দাগটুকু পৰ্য্যন্ত পাষণ্ডের মনে নাই, লালসার সেই অগ্নিজিহা আজ যখন অকস্মাং বাধা পাইল, তখন কিছুক্ষণের জন্য এই অপরিচিত বিস্ময়ে তাহার মদোন্মত্ত বিকৃত দৃষ্টি স্তব্ধ, গম্ভীর এবং আবিষ্ট হইয়া রহিল। ভৈরবীকে মাথায় কাপড় দিতে নাই, সে অধোমুখে চোখ বুজিয়া হতজ্ঞানের ন্যায় দাড়াইয়া রহিল, কিন্তু জীবানন্দ মীরবে ফিরিয়া গিয়া আলোট রাখিয়া দিল এবং মদের বোতল হইতে কয়েক পাত্র উপযুপিরি পান করিতে লাগিল । মিনিট পোনের এইভাবে নিঃশব্দে কাটিয়া গেল, হঠাৎ এক সময়ে সে সোজা হইয়। উঠিয়া বসিল । মনে হইল এতক্ষণে সে তাহার মুস্থিতপ্রায় পশুপ্রকৃতিটাকে চাবুক মারিয়া মারিয়া উত্তেজিত করিয়া তুলিয়াছে। প্রশ্ন করিল, তোমার নাম ষোড়শী, না ? এ-পক্ষ হইতে কোন সাড়া আসিল না । জীবানন্দ পুনশ্চ জিজ্ঞাসা করিল, তোমার বয়স কত ? কিন্তু তথাপি কোন উত্তর না পাইয়া তাহার কণ্ঠস্বর কঠিন হইল, কহিল, চুপ করে থেকে কোন লাভ হবে না । জবাব দাও । ষোড়শী অনেক কষ্টে মৃদুস্বরে কহিল, আমার বয়স ছাব্বিশ । জীবানন্দ বলিল, বেশ ! তাহলে খবর যদি সত্য হয় ত এই উনিশ-কুড়ি বৎসর סיל