পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/২১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ সে যে শেখরের বিশেষ স্নেহের পাত্রী তাহ সবাই জানিত, শুধু সেই স্নেহ ষে এখন কোথায় উঠিয়াছে, তাহাই কেহ জানিত না, ললিতাও না। শিশুকাল হইতে শেখরের কাছে তাহাকে এইভাবে এত অপৰ্য্যাপ্ত অাদর পাইতে সবাই দেখিয়া আসিয়াছে যে, আজ পর্য্যন্ত তাহার কোন আদরই কাহারো চোখে বিসদৃশ বোধ হয় না, কিংবা কোন ব্যবহারই কাহারে দৃষ্টি আকর্ষণ করে না। করে না বলিয়াই সে যে কোনও দিন বন্ধুরূপে এই গৃহে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে, সে সম্ভাবনাও কাহারও মনে উদয় হয় নাই। ললিতাদের বাড়িতেও হয় নাই, ভুবনেশ্বরীর মনেও হয় নাই । ললিতা ভাবিয়। রাখিয়াছিল, কাজ শেষ করিয়া শেখর আসিবার পূৰ্ব্বেই চলিয়া যাইবে ; কিন্তু অন্তমনস্ক ছিল বলিয়া ঘড়ির দিকে নজর করে নাই। হঠাৎ দ্বারের বাহিরে জুতোর মস মন্স শব্দ শুনিয়া মুখ তুলিয়াই একপাশে সরিয়া দাড়াইল । শেখর ঘরে ঢুকিয়াই বলিল, এই যে ! কাল তা হলে ফিরতে কত রাত হ’লে ? ললিতা জবাব দিল না। শেখর একটা গদি-আঁটা আরাম-চৌকির উপর হেলান দিয়া শুইয়া পড়িয়া বলল, ফেরা হ’লে কখন ? দুটো ? তিনটে ? মুখে কথা নেই কেন ? ললিতা তেমনি চুপ করিয়া দাড়াইয়া রহিল। শেখর বিরক্ত হইয়া বলিল, নীচে যাও, মা ডাকচেন । ভুবনেশ্বরী ভাড়ারের স্বমুখে বসিয়া জলখাবার সাজাইতেছিল, ললিত কাছে আসিয়া বলিল, ডাকছিলে মা ? কই ডাকিনি ত, বলিয়া মুখ তুলিয়া তাহার মুখের পানে চাহিয়া বলিলেন, মুখখানি এমন শুকনো কেন ললিতে ? কিছু খাস্নি বুঝি এখনো ? ললিত ঘাড় নাড়িল । ভুবনেশ্বরী বলিলেন, আচ্ছ যা তোর দাঙ্গাকে খাবার দিয়ে আমার কাছে আয় । ললিতা খাবার হাতে করিয়া খানিক পরে উপরে আসিয়া দেখিল, তখনো শেখর তেমনিভাবে চোখ বুজিয়া পড়িয়া আছে, অফিসের পোষাকও ছাড়ে নাই, হাতমূখও ধোয় নাই । কাছে আসিয়া আস্তে আস্তে বলিল, খাবার এনেচি । শেখর চাহিয়া দেখিল না । বলিল, কোথাও রেখে দিয়ে যাও । ললিত রাখিয়া দিল না, হাতে করিয়া চুপ করিয়া দাড়াইয়া রহিল। শেখর না চাহিয়াও বুঝিতেছিল, ললিতা স্বায় নাই, দাড়াইয়া আছে। মিনিট-দুইতিন নি:শৰে থাকিয়া বলি, কতক্ষণ দাড়িয়ে থাকবে ললিত, আমার দেরি আছে, রেখে নীচে যাও । 3 3 а