পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/২২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিণীত গিরীন সঙ্কোচের সহিত বলিল, তা হলে জাফিসে কি কিছু— না, তাও ত কিছু নয়, বলিয়া গুরুচরণ একটু বিস্ময়ের সহিত গিরীনের মুখের দিকে চাহিলেন। তাহার ভিতরের উদ্বেগ যে বাহিরে প্রকাশ পাইতেছিল, তাহা এই নিতাপ্ত সরল-প্রকৃতির মানুষটি বুঝিতেই পারেন নাই । ললিতা পূৰ্ব্বে একেবারেই চুপ করিয়া থাকিত, কিন্তু আজকাল দু-একটা কথায় মাঝে মাঝে যোগ দিতেছিল। সে বলিল, ই মামা, আজ তোমার হয়ত মন ভাল নেই। গুরুচরণ হাসিয়া উঠিয়া বলিলেন, ও সেই কথা ? হুঁ মা, ঠিক ধরেচিস বটে, আজ আমার সত্যিই মনটা ভাল নেই। ললিতা ও গিরীন উভয়েই র্তাহার মুখপানে চাহিয়া রহিল। গুরুচরণ বলিলেন, নবীনদা সমস্ত জেনে-শুনে গোট-কতক শক্ত কথা পথে দাড়িয়েই শুনিয়ে দিলেন। আর র্তারই বা দোষ কি, ছ'মাস হয়ে গেল, একটা পয়সা স্বদ দিতে পারলুম না, তা আসল দূরে থাক । ব্যাপারটা ললিতা বুঝিয়াই চাপা দিয়া ফেলিবার জন্য ব্যস্ত হইয়া উঠিল। তাহার কাগুজ্ঞানহীন মামা পাছে ঘরের লজ্জাকর কথাগুলা পরের কাছে ব্যক্ত করিয়া ফেলে, এই ভয়ে সে তাড়াতাড়ি বলিয়া উঠিল, তুমি ভেবো না মামা, সে-সব পরে হবে । কিন্তু গুরুচরণ সেদিক দিয়াও গেলেন না । বরং বিষন্নভাবে হাসিয়া বলিলেন, পরে আর কি হবে মা ? তা নয় গিরীন, আমার এই মাটি চায় তার বুড়ে ছেলেটি যেন কিছু ভাবনা-চিস্তা না করে। কিন্তু বাইরের লোক ষে তোর দুঃখী মামার দুঃখট চেয়ে দেখতেই চায় না ললিতে । গিরীন জিজ্ঞাসা করিল, নবীনবাবু আজ কি বললেন ? গিরীন যে সমস্ত কথাই জানে ললিতা তাহ জানিত না, তাই তাহার প্রশ্নটাকে অসঙ্গত কৌতুহল মনে করিয়া অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হইয়া উঠিল। গুরুচরণ খুলিয়া বলিলেন। নবীন রায়ের স্ত্রী বহুদিন হইতে অজীর্ণ রোগে ভূগিতেছিলেন, সম্প্রতি রোগ কিছু বৃদ্ধি হওয়ায় চিকিৎসকেরা বায়ু-পরিবর্তনের ব্যবস্থা করিয়াছেন। অর্থের প্রয়োজন, অতএব এই সময়ে গুরুচরণের সমস্ত স্থদ এবং কিছু আসল দিতেই হইবে । গিরীন ক্ষণকাল স্থির থাকিয়া মৃদু-কণ্ঠে বলিল, একটা কথা আপনাকে বলি বলি করেও বলতে পারিনি, যদি কিছু না মনে করেন, আজ তা হলে বলি । গুরুচরণ হাসিয়া উঠিলেন, বলিলেন, আমাকে কোন কথা বলতে কেউ কখন ত সঙ্কোচ করে না গিরীন,—কি কথা ? १ $ £