পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/২৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ তাহার চোখ জালা করিয়া লজ্জায় অভিমানে দুই চোখ জলে ভরিয়া গেল। সে এত ছোট নহে যে, এসব কথার তাৎপৰ্য্য সম্পূর্ণ হৃদয়ঙ্গম করিতে পারে না, তবে কেন তাহাকে এমন মৰ্ম্মান্তিক উপহাস করা ! সে কত তুচ্ছ, কত নীচে, এ-কথা বুঝিবার তাহার যথেষ্ট বয়স হইয়াছে। সে ঠিক জানে, সে অনাথ এবং নিরুপায় বলিয়া তাহাকে সবাই আদর ও যত্ন করে-শেখরও করে, তাহার জননীও করেন। তাহার আপনার বলিতে কেহ নাই, সত্যকার দায়িত্ব তাহার কাহারও উপর নির্ভর করে না বলিয়াই গিরীন সম্পূর্ণ পর হইয়াও তাহাকে উদ্ধার করিয়া দিবার কথা তুলিতে পারিয়াছেন । ললিতা চোখ মুদিয়া মনে মনে বলিল, এই কলিকাতার সমাজে তাহার মামার অবস্থা ত শেখরদের কত নীচে, সে আবার সেই মামার আশ্রিত গলগ্রহ। ওদিকে সমান ঘরে শেখরের বিবাহের কথাবার্তা চলিতেছে, দুদিন আগেই হৌক, পাছেই হৌক, সেই ঘরেই একদিন হইবে । এই বিবাহ উপলক্ষ্যে নবীন রায় কত টাকা আদায় করিবেন সে-সব আলোচনাও সে শেখরের জননীর কাছে শুনিয়াছে। তবে কেন তাহাকে হঠাৎ আজ এমন করিয়া শেখরদা অপমান করিয়া বসিল ! এই সব কথা ললিতা স্বমুখের দিকে শূন্তদৃষ্টিতে চাহিয়া নিজের মনে মগ্ন হইয়া আলোচনা করিতেছিল, সহসা চমকিয়া মুখ ফিরাইয়া দেখিল শেখর নিঃশব্দে হাসিতেছে। ইতিপূৰ্ব্বে যে উপায়ে মালাটা সে শেখরের গলায় পরাইয়া দিয়াছিল, ঠিক সেই উপায়ে সেই গাঁদা ফুলের মালাটা তাহার নিজের গলায় ফিরিয়া আসিয়াছে। কান্নায় তাহার কণ্ঠ রুদ্ধ হইয়া আসিতে লাগিল, তবু সে জোর করিয়া বিকৃতস্বরে বলিল, কেন এমন করলে ? তুমি করেছিলে কেন ? আমি কিছু করিনি, বলিয়াই সে মালাটা টান মারিয়া ছিড়িয়া ফেলিবার জন্য হাত দিয়াই হঠাৎ শেখরের চোখের দিকে চাহিয়া থামিয়া গেল। আর ছিড়িয়া ফেলিতে সাহস করিল না, কিন্তু কাদিয়া বলিল, আমার কেউ নেই বলেই ত তুমি এমন করে আমাকে অপমান করচ ! শেখর এতক্ষণ মৃদু মৃদু হাসিতেছিল, ললিতার কথা শুনিয়া অবাক হইয়া গেল। এ ত ছেলেমাহুষের কথা নয়! কহিল, আমি অপমান করছি, না তুমি আমাকে জপমান করছ ? ললিতা চোখ মুছিয়া ভয়ে ভয়ে বলিল, আমি কই অপমান করলুম ? শেখর ক্ষণকাল স্থির থাকিয়া সহজভাবে বলিল, এখন একটু ভেবে দেখলেই টের পাৰে। আজকাল বড় বাড়াবাড়ি করছিলে ললিতা, আমি বিদেশ যাবার আগে সেইটেই তোমার বন্ধ করে দিলাম।—বলিয়া চুপ করিল। శ్రీe