পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰন্থ কেউ এ বেয়াদপি করলে এতক্ষণ তাকে পাইকদের ঘরে পাঠিয়ে দিতুম। এমন অনেককে দিয়েচি । ইহা ভিত্তিহীন শূন্ত আস্ফালন নহে, তাহা শুনিলেই বুঝা যায়। ষোড়শী অকস্মাৎ কাদিয়া ফেলিল, গলায় আঁচল দিয়া দুই হাত জোড় করিয়া অশ্রুরুদ্ধ-স্বরে কেবল কহিল, আমার যা-কিছু আছে সব নিয়ে আজ আমাকে ছেড়ে দিন । জীবানন্দ মুহূৰ্ত্তকাল চুপ করিয়া থাকিয়া বলিল, কেন বল ত? এরকম কান্নাও নতুন নয়, এ-রকম ভিক্ষেও এই নতুন শুনচি নে ! কিন্তু তাদের সব স্বামী-পুত্র ছিল— কতকটা না হয় বুঝতেও পারি। তাহাদের স্বামী-পুত্র ছিল! শুনিয়া ষোড়শী শিহরিয়া উঠিল। জীবানন্দ কহিতে লাগিল, কিন্তু তোমার ত সে বালাই নেই! পোনের-ষোল বছরের মধ্যে তোমার স্বামীকে ত তুমি চোখেও দেখ নি। তা ছাড়া তোমাদের ত এতে দোষই নেই । ষোড়শী যুক্তহস্তেই দাড়াইয়া ছিল, অশ্ৰুরুদ্ধ-স্বরে বলিল, স্বামীকে আমার ভাল মনে নেই সত্যি, কিন্তু তিনি ত আছেন । যথার্থ বলচি আপনাকে, কখনো কোন অন্যায়ই আমি আজ পর্য্যন্ত করিনি। দয়া করে আমাকে ছেড়ে দিন । জীবানন্দ হাক দিয়া ডাকিল, মহাবীর— ষোড়শী আতঙ্কে র্কাপিয়া উঠিয়া বলিল, আমাকে আপনি মেরে ফেলতে পারেন, কিন্তু— জীবানন্দ কহিল, আচ্ছা, ও বাহাদুরী কর গে ওদের ঘরে গিয়ে, মহাবীর -- ষোড়শী মাটিতে লুটাইয়া পড়িয়া কাদিয়া বলিল, কারও সাধ্য নেই আমাকে প্রাণ থাকতে নিয়ে যেতে পারে। আমার যা-কিছু দুর্দশা, যত অত্যাচার আপনার সামনেই হোক –আপনি আজও ব্রাহ্মণ, আপনি আজও ভদ্রলোক । কিন্তু এতবড় অভিযোগেও জীবানন হাসিল ; সে হাসি যেমন কঠিন তেমনি নিষ্ঠর কহিল, তোমার কথাগুলো শুনতে মন্দ নয় ; কিন্তু কান্না দেখে আমার দয়া হয় না। ও আমি অনেক শুনি । মেয়েমানুষের ওপর আমার এতটুকুও লোভ নেই— ভাল না লাগলেই চাকরদের দিয়ে দিই। তোমাকেও দিয়ে দিতুম, শুধু এই বোধ হয় আজ প্রথম একটু মোহ জন্মেচে । ঠিক জানিনে—নেশা না কাটলে ঠাওর পাচ্চিনে । মহাবীর দ্বারপ্রাস্তে উপস্থিত হইয়া সাড়া দিল, হুজুর ! জীবানন্দ সম্মুখের কবাটটা অঙ্গুলি-নিৰ্দেশ করিয়া বলিল, একে আজ রাত্রের মত ও-ঘরে বন্ধ করে রেখে দে । কাল আবার দেখা যাবে। ষোড়শী গলদশ্রনয়নে কহিল, আমার সৰ্ব্বনাশটা একবার ভেবে দেখুন হুজুর । কাল ষে আমি আর মুখ দেখাতে পারবো না।

  • \o