পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/২৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিণীত শেখর চুপ করিয়া রহিল। ভুবনেশ্বরী চোখ মুছিয়া বলিলেন, আমার ললিতা মেয়েটাকে যদি সঙ্গে আনতুম, তা হলে যা হয় একটা উপায় আমাকেই করে দিতে হতো–দিতামও । আমি ত জানিনে, গুরুচরণ এই-সব মতলব করেই পাঠিয়ে দিলে না। আমি মনে করেছিলুম বুঝি সত্যই তার বিয়ের সম্বন্ধ হচ্চে । শেখর মায়ের মুখে দিকে চাহিয়া একটুখানি লজ্জিতভাবে বলিল, বেশ ত মা, এখন বাড়ি গিয়ে তাই কর না কেন ? সে ত আর ব্রাহ্ম হয়নি—তার মামাই হয়েচে —জার তিনিও কিছু তার যথার্থ আপনার কেউ নন। ললিতার কেউ নেই বলেই তার ঘরে মানুষ হচে । ভুবনেশ্বরী ভাবিয়া বলিলেন, তা বটে, কিন্তু কৰ্ত্ত এক রকমের মানুষ, তিনি কিছুতেই রাজী হবেন না। হয়ত তাদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ পৰ্য্যস্ত করতে দেবেন না । শেখরের নিজের মনেও এই আশঙ্কা যথেষ্ট ছিল, সে আর কিছু না বলিয়া চলিয়া গেল । ইহার পরে আর এক মিনিটও তাহার বিদেশে থাকিতে ইচ্ছা রছিল না। দু-তিনদিন চিন্তিত অপ্রসন্ন-মুখে এদিক-ওদিক ঘুরিয়া বেড়াইয়া একদিন সন্ধ্যর সময় আসিয়া বলিল, আর ভাল লাগচে না মা, চল বাড়ি যাই ! ভুবনেশ্বরী তৎক্ষণাৎ সম্মত হইয়া বলিলেন, তাই চল শেখর, আমারও কিছু ভাল লাগচে না । বাড়ি ফিরিয়া আসিয়া মাতাপুত্র উভয়েই দেখিলেন, ছাদের সেই যাতায়াতের পথটা বন্ধ করিয়া প্রাচীর উঠিয়াছে। গুরুচরণের সহিত আর কোন সম্পর্ক রাখা, এমন কি মুখের আলাপ রাখাও যে কৰ্ত্তার অভিপ্রেত নয়, তাহা কাহাকেও না জিজ্ঞাসা করিয়াই উভয়ে বুঝিলেন। স্বাত্রে শেখরের আহারের সময় মা উপস্থিত ছিলেন, দুই-একটা কথার পরে বলিলেন, ওদের গিরীনবাবুর সঙ্গেই ললিতার বিয়ে দেবার কথাবার্তা হচ্ছে। আমি তা আগেই বুঝেছিলাম। শেখর মুখ না তুলিয়াই জিজ্ঞাসা করিল, কে বললে ? ওর মামী। দুপুরবেলা কর্তা ঘুমোলে আমি নিজেই গিয়ে দেখা করে এসেচি। সেই অবধি কেঁদে কেঁদে চোখ-মুখ ফুলিয়ে ফেললে। ক্ষণকাল মৌন থাকিয় তিনি নিজের চোখ দুটি আঁচলে মুছিয়া ফেলিয়া বলিলেন, কপাল, শেখর, কপাল। এই কপালের লেখা কেউ খণ্ডাতে পারে ন!—কার আর দোষ দিই বল ! যাই হোক, গিরীন ছেলেটি ভাল, সঙ্গতিও আছে, ললিতার কষ্ট হবে না,—বলিয়৷ চুপ করিলেন । ఫిలిర ●哥一°