পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/২৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ ললিতা চেঁচাইয়া বলিল, যাচ্ছি, তার পর গলা খাট করিয়া বলিল, মামা যাই হোন, তুমি ষ, আমিও তাই। মা তোমাকে যদি ফেলতে না পারেন, আমাকে৪ ফেলবেন না। আর গিরীনবাবুর কাছে টাকা নেবার কথা বলচ-ত লে আমি ফিরিয়ে দেব। আর ঋণের টাকা, দু'দিন আগেই হোক পিছনেই হোক, দিতেই তো হবে । শেখর প্রশ্ন করিল, অত টাকা পাবে কোথায় ? ললিত শেখরের মুখের পানে একটিবার চোখ তুলিয়া মুহূৰ্ত্তকাল মৌন থাকিয়া বলিল, জান না, মেয়েমামুষে কোথায় টাকা পায় ? আমিও সেইখানে পাব। এতক্ষণ শেখর সংঘত হইয়া কথা কহিতে থাকিলেও ভিতরে পুড়িতেছিল, এবার বিষ্ক্রপ করিয়া বলিল, কিন্তু তোমার মামা তোমাকে বিক্রী করে ফেলেছেন যে ? ললিতা অন্ধকারে শেখরের মুখের ভাব দেখিতে পাইল না, কিন্তু কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন টের পাইল । সে দৃঢ়স্বরে জবাব দিল, ও-সব মিছে কথা । আমার মামার মত মানুষ সংসারে নেই—তাকে তুমি ঠাট্টা ক’রে না। তার দুঃখ-কষ্ট তুমি না জানতে পার, কিন্তু পৃথিবীমৃদ্ধ লোক জানে, বলিয়া একবার ঢোক গিলিয়া একবার ইতস্ততঃ করিয়া শেষে বলিল, তা ছাড়া তিনি টাকা নিয়েচেন, আমার বিয়ে হবার পূৰ্ব্বে, স্বতরাং আমাকে বিক্ৰী করবার অধিকারও তার নেই, বিক্ৰীও করেননি। এ অধিকার আছে শুধু তোমারি, তুমি ইচ্ছে করলে টাকা দেবার ভয়ে আমাকে বিক্রী করে ফেলতে পার বটে !—বলিয়া উত্তরের জন্য অপেক্ষ না করিয়াই দ্রুতপদে চলিয়া গেল । মৰম পরিচ্ছেদ সে রাত্রে বহুক্ষণ পর্য্যন্ত শেখর বিহালের মত পথে পথে ঘুরিয়া ঘরে ফিরিয়া আসিয়া ভাবিতেছিল, সেদিনকার এক ফোট ললিতা এত কথা শিখিল কিরূপে ? এমন নির্লজ্জ মুখরার মত তাহার মুখের উপর কথা কহিল কি করিয়া ? আজ সে ললিতার ব্যবহারে সত্যই অত্যন্ত বিম্বিত ও ক্রুদ্ধ হইয়াছিল। কিন্তু এই ক্রোধের যথার্থ হেতুটা কি, এ যদি শাস্ত হইয়া ভাবিয়া দেখিত, তাহা হইলে দেখিতে পাইত রাগ ললিতার উপর নহে, তাহ সম্পূর্ণ নিজের উপরেই। శికి