পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/২৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ মোহ ছিল, এবং প্রণয়ীরা বাহাকে অধৱস্থধা বলিয়াছেন, তাহাই পান করিবার অতি তীব্র নেশা ছিল। তখন স্বার্থ এবং সাংসারিক ভালমন্দ মনে পড়ে নাই, অর্থলোলুপ পিতার ক্ষত্র মূৰ্ত্তি চোখের উপর জাগিয়া উঠে নাই। ভাবিয়াছিল, মা ত ললিতাকে গ্রেহ করেন, তখন তাহাকে সম্মত করানো কঠিন হইবে না এবং দাদাকে দিয়া পিতাকে কোনমতে কোমল করিয়া আনিতে পারিলে, শেষ পর্য্যম্ভ হয়ত কাজটা হইয়াই যাইবে । তা ছাড়া, গুরুচরণ এইভাবে তখন নিজেকে বিচ্ছিন্ন করিয়া তাহাদের আশার পথটা পাথর দিয়া এমন ভাবে আঁটিয়া বন্ধ করেন নাই। এখন যে বিধাতাপুরুষ নিজে মুখ ফিরাইয়া বসিয়াছেন। বস্তুত শেখরের চিস্তা করিবার বিশেষ কিছু ছিল না। সে নিশ্চয় বুঝিতেছিল, পিতাকে সম্মত করানো ত ঢের দূরের কথা জননীকে সম্মত করানোও সম্ভব নহে। এ-কথা যে মুখে আনিবারও পথ নাই। শেখর দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া আর একবার অস্ফুটে আবৃত্তি করিল, কি করা যায়। সে ললিতাকে বেশ চিনিত, তাহাকে নিজের হাতে মানুষ করিয়াছে— একবার যাহা নিজের ধৰ্ম্ম বলিয়া বুঝিয়াছে, কোনমতেই তাহাকে ত্যাগ করিবে না ! সে জানিয়াছে, শেখরের ধর্মপত্নী, তাই আজ সন্ধ্যার অন্ধকারে অসঙ্কোচে বুকের কাছে সরিয়া আসিয়া মুখের কাছে মুখ তুলিয়া অমন করিয়া দাড়াইতে পারিয়াছিল । গিরীনের সহিত তাহার বিবাহের কথাবার্তা শুরু হইয়াছে—কিন্তু কেহই তাহাকে ত সম্মত করাইতে পরিবে না। আর ত সে কোনমতেই চুপ করিয়া থাকিবে না। এখন সমস্ত প্রকাশ করিয়া দিবে। শেখরের চোখ-মুখ উত্তপ্ত হইয়া উঠিল। সত্যই ত! সে ত শুধু মাল-বদল করিয়াই ক্ষান্ত হয় নাই, তাহাকে বুকের উপর টানিয়া লইয়া তাহার মুখচুম্বন করিয়াছিল। ললিত বাধা দেয় নাই—ইহাতে তাহার অধিকার আছে বলিয়াই দেয় নাই, এখন এই ব্যবহারের জবাৰ কার কাছে কি দিবে ? পিতামাতার অমতে ললিতার সহিত বিবাহ হইতে পারে না তাহ নিশ্চয়, কিন্তু গিরীনের সহিত ললিতার বিবাহ না হইবার হেতু প্রকাশ পাইবার পর ঘরে-বাহিরে সে মুখ দেখাইবে কি করিয়া ? - ২৩৮